প্রার্থনা কবিতার বিষয়বস্তু আলোচনা করো || দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা
প্রার্থনা কবিতার বিষয়বস্তু:
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য' কাব্যগ্রন্থের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা 'প্রার্থনা'। ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের সহজসরল অথচঅকুতোভয়, আনতশির মানসিকতাকে মন-প্রাণ দিয়ে শ্রদ্ধা করেছেন। কবির বর্তমান ভারতবর্ষ যেন সংকীর্ণ চেতনা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, আচারসর্বস্ব ও যুক্তিহীনতার স্বীকার হয়ে পড়েছে। কবি সেই ভারতবর্ষকে আকাঙ্ক্ষা করেছেন যেখানে ভয়শূন্য চিত্তে, উন্নতশির দেশবাসী কর্মসাধন করবে; যেখানে জ্ঞানচর্চার প্রেক্ষিত হবে বাধাবন্ধনহীন; মুক্তচিন্তার বিস্তার ঘটবে সেখানে।সেই ভারতের অধিবাসীদের কাছে সুযোগ থাকবে স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার, গণ্ডিবদ্ধ জীবনচেতনার জটাজাল থেকে তারা বেরিয়ে আসার সাহস দেখাবে। ভারতীয়রা হবেন প্রকৃতই কর্মবীর। অর্থাৎ বিবিধ কর্মের মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে বিকশিত করার সুযোগ পাবে এবং ‘দেশে দেশে দিশে দিশে তাদের কর্মধারা প্রসারিত হবে। বর্তমানে দেশবাসী যেন বিচারবিবেচনাহীন ও বিবেকবোধহীন ভারতীয়তে পরিণত হয়েছে। আপন কর্মসাধনা ও জ্ঞানচর্চার বিকাশের মাধ্যমে ভারতীয়রা নিজেদেরকে সার্থক করে তুলবে; তুচ্ছ আচারের সংকীর্ণতা তাদের মনন তথা বিবেকের সুকুমার প্রবৃত্তিকে গ্রাস করবে না; প্রাচীন ভারতের সৌর্য-বীর্য তথা বীরত্বের সাধনায় বর্তমান ভারতীয়রা হয়ে উঠবেন পৌরুষদীপ্ত—এমন ভারতের আকাঙ্ক্ষা করছেন কবি।
কবির মতে পরমপুরুষ তথা পরমেশ্বর সর্বশক্তিমান। তাই তাঁর কাছে কবির বিনম্র প্রার্থনা—তিনি যেন কল্পচেতনায় আঘাত হেনে ভারতীয়দের চিন্তার জড়তা থেকে, জ্ঞানচর্চার সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করেন। কারণ পরম পিতা স্বয়ং সকল কর্ম-চিন্তা-আনন্দের হোতা। তাই তিনিই মানসিক দুর্বলতা, ভীরুতার সাধনা, সংকীর্ণতা থেকে ভারত তথা ভারতবাসীকে মুক্ত করে ভারতকে স্বর্গসুখ প্রদানকারী দেশে পরিণত করবেন।
