হলুদ পোড়া গল্পে লেখক যে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তা তোমার নিজের ভাষা লেখো। দ্বাদশ শ্রেণী
প্রশ্ন:- "হলুদ পোড়া" গল্পে লেখক যে ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন- তা তোমার নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর : আবহমান বাংলার গ্রাম্য সমাজব্যবস্থার দিকটি লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর হলুদ পোড়া গল্পের মধ্যে তুলে এনেছেন। গ্রামবাসীর
কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যে যে দূরত্ব বিজ্ঞানের ছাত্র ও যুক্তিবাদী লেখক এ গল্পে তুলে ধরেছেন। গ্রাম্য সমাজ ব্যবস্থায় কুসংস্কার, দলাদলি যেমন ছিল; তেমনি ছিল অন্যের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মানুষের অতিরিক্ত আগ্রহ।কখনো কখনো শুধুমাত্র নিজেদের কল্পনাকে আশ্রয় করে তারা অনেক অসম্ভব, অবাস্তব কাহিনির জন্ম দিত। অলৌকিকতার মোড়কে লেখক সেইসব মানুষের
অবচেতন মনের নানান পরিসর এ গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন।
এ গল্পের প্রথম থেকেই একটা ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন লেখক, এবং তা পাঠকমনে ধীরে ধীরে প্রবেশ করান আর একে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সঞ্চারিত করেছেন গল্পের শেষে ধীরেনের মাধ্যমে। প্রথমে অল্প ব্যবধানে দুটি খুন, দামিনীর ওপর অশরীরী আত্মার ভর, কুণ্ডের গুণপনার গা-ছমছমে পরিবেশ, ক্ষেন্তি পিসির পোড়া বাঁশের বিধান, ধীরেনের স্ত্রী শান্তি ও ছেলেমেয়েদের মধ্যে সর্বদা আতঙ্কিত ভাবনা “ছোটপিসি ভূত হয়েছে।” এবং বোন শুভ্রার আত্মাকে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেবার জন্য ধীরেনের যুক্তিবাদী মনের অলৌকিকতার কাছে আত্মসমর্পণ-এসব কিছুই পাঠকমনে একটা ভৌতিক রস সঞ্চার করতে পেরেছে। একটা ভৌতিক আবহাওয়ার মধ্যেই গল্পটি শেষ হয়েছে। একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা ধীরেনের বিজ্ঞানমনস্ক মনকে কীভাবে ধীরে ধীরে গ্রাস করল তার সুন্দর বর্ণনা আছে এ গল্পে। বিজ্ঞানপড়া মনকেও যে একটা ভৌতিক কুসংস্কার আচ্ছন্ন করতে পারে- এই গল্পে তার সুন্দর বিশ্লেষণ আছে। এটি চমৎকার ভৌতিক গল্প। গল্পের শুরু।থেকে শেষ পর্যন্ত এর কাহিনি চুম্বকের মতো পাঠকমনকে আকর্ষণ করেছে।
মানিকের স্বভাবসুলভ তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ শক্তি এই ভৌতিক গল্পকেও পাঠকের কাছে সমান আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
