প্রার্থনা কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। দ্বাদশ শ্রেণী - Online story

Friday, 19 December 2025

প্রার্থনা কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা করো। দ্বাদশ শ্রেণী



 প্রার্থনা কবিতা নামকরণের সার্থকতা :

দ্বাদশ শ্রেণী : বাংলা

উত্তর-যে কোন বিষয় বস্তুর নামকরণে একটা যথেষ্ট তাৎপর্য আছে । নামকরণের মাধ্যমেই রচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে আগাম ধারণা করা যায়। সাহিত্যের একটি প্রধান অঙ্গ হল নামকরণ।
নামকরণ বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- বিষয়কেন্দ্রিক, চরিত্র প্রধান, ব্যঞ্জনধর্মী ইত্যাদি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য' কাব্যগ্রন্থের ৭২ নং কবিতা, যার প্রথম চরণ—'চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির’; এই কবিতাটিই আমাদের পাঠ্যাংশের 'প্রার্থনা' কবিতা। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, 'নৈবেদ্য' কাব্যের কোনো
কবিতারই নামকরণ করেননি কবি। হয়তো শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা চিন্তা করেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ আলোচ্যমান কবিতাটির একটি গ্রহণযোগ্য নামকরণ করেছেন 'প্রার্থনা'।
'প্রার্থনা' শব্দের মাধ্যমে কারও কাছে বিনম্র চিত্তে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা। এখানে ভগবানের কাছে কিছু চাওয়াকে
বোঝানো হয়েছে। 'নৈবেদ্য' কাব্যের অন্যান্য অনেক কবিতার মতোই্ ৭২ নং কবিতাটিতেও ভগবানের কাছে ভারতবাসীর আত্মিক শক্তিলাভের প্রার্থনা করেছেন কবিগুরু। প্রাচীন ভারতের আদর্শে শ্রদ্ধাশীল কবি উপলব্ধি করেছেন বর্তমান ভারতীয়দের আত্মিক অবনতি ঘটেছে অনেকখানি। নানা দুর্বলতায় আচ্ছন্ন আজকের ভারতীয় মনন। দেশবাসীর দুর্দশা উপলব্ধি করে তাদের হৃদয়ে প্রকৃত জীবনসত্যকে উন্মোচিত করার প্রার্থনা করেছেন কবি পরমেশ্বরের কাছে। কবিতাটি হয়ে উঠেছে ভগবানের কাছে ভক্তিবিনম্র কবিচিত্তের আন্তরিক প্রার্থনা'।
পরমেশ্বরের কাছে কবি সেই ভারতের প্রার্থনা করেছেন—যেখানে ভারতীয়রা হবেন মানসিকতায় ভয়শূন্য, উন্নত শির। তাঁরা হবেন মুক্ত জ্ঞানের অধিকারী; গৃহের ক্ষুদ্র গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকবে না তাদের জ্ঞানচর্চা। ভারতীয়রা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষার। ক্ষুদ্র আচারের গণ্ডি থাকবে না তাদের মধ্যে। মানবমনের হৃদয়ের উৎসমুখ থেকে উৎসারিত হবে নির্দ্বিধায়। সেই ভারতের অধিবাসীগণ সর্বক্ষণ লিপ্ত থাকবেন কর্মের সাধনায়। তাদের চলার পথে কোনো বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। সংকীর্ণ চেতনার বেড়াজাল ভারতীয়দের বিচারবোধকে আচ্ছন্ন করতে পারবে না। অখণ্ড পৌরুষত্ব বজায় থাকবে তাদের–এমন ভারতের আকাঙ্ক্ষা করেছেন কবিগুরু। কবিগুরু অনুভব করেন পরমেশ্বরই সকল কর্ম, চিন্তা ও আনন্দের হোতা। তাই তাঁর কাছেই কবি প্রার্থনা করেছেন পূর্বোক্ত আকাঙ্ক্ষাগুলির সফল রূপায়ণের। পরমেশ্বর যেন কঠিন আঘাতের মাধ্যমে ভারতীয়দের চৈতন্যের জগৎকে জাগ্রত করে তোলেন, যাতে ভারতীয়রা পুনরায় প্রাচীন গৌরব ফিরে পায়, ভারতবর্ষ যেন আবার নতুন প্রাণবন্যায় ভাসতে পারে-এমন প্রার্থনাই কবিগুরু পরমেশ্বরের কাছে করেছেন।
এভাবেই আলোচ্যমান কবিতায় পরমেশ্বরের প্রতি কবিহৃদয়ের বিনম্র প্রার্থনা প্রকাশিত হয়েছে। তাই সামগ্রিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে কবিতাটির নামকরণ ‘প্রার্থনা’ ব্যঞ্জনাময় ও সার্থক হয়েছে বলে আমার মনে হয় ।