জ্ঞান যেথা মুক্ত। উক্তিটির তাৎপর্য লেখো। | প্রার্থনা কবিতা | দ্বাদশ শ্রেণী
প্রশ্ন: “জ্ঞান যেথা মুক্ত,”–উদ্ধৃতাংশটির তাৎপর্য লেখো।
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ৭২ নং কবিতা ‘প্রার্থনা’ থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় প্রাচীন ভারতবর্ষের জ্ঞানচর্চার প্রসঙ্গে কবি উক্তিটি করেছেন।মানব জগৎ ও জীবনের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন জ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানো। পাঠ্যপুস্তকের গণ্ডিবদ্ধতা থেকে বাইরে বের করে আনতে হবে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রকে। পাঠ্যপুস্তক থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়, তাকে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে, সেই জ্ঞানের জগৎকে সমৃদ্ধ করে তুলতে হবে। প্রকৃতি থেকে যে জ্ঞান অর্জন করা হয়, তা কোনো সংকীর্ণ গণ্ডিতে বন্ধ থাকে না, অর্থাৎ
সেখানে থাকে না ক্ষুদ্র চিন্তাচেতনার অবকাশ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে মিশে জ্ঞানচর্চার পরিধিকে প্রসারিত করতে হবে। সংকীর্ণ চেতনা, মানসিক দীনতা, আচার সর্বস্বতার দ্বারা যে জ্ঞান কালিমালিপ্ত হয়নি, তাই হল মুক্ত জ্ঞান।
কবি এমন ক্ষেত্রই আকাঙ্ক্ষা করেছেন, যেখানে এমন মুক্ত জ্ঞানের চর্চা হবে।
প্রশ্ন:“বসুধারে রাখে নাই ক্ষুদ্র খন্ড করি,” – প্রসঙ্গসহ উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য আলোচনা করো।
উত্তর : কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'নৈবেদ্য' কাব্যের অন্তর্গত ৭২ নং কবিতা 'প্রার্থনা' থেকে প্রশ্নে উদ্ধৃত অংশটি নেওয়া হয়েছে। প্রাচীন ভারতবর্ষের বাধাবন্ধনহীন মুক্ত জ্ঞানচর্চা প্রসঙ্গেই কবি উক্তিটি করেছেন।
প্রাচীন ভারতের জ্ঞানচর্চা ছিল কোনোপ্রকার সংকীর্ণতাহীন, ক্ষুদ্র আচারের বন্ধনহীন; তবে বর্তমান ভারতের অবস্থান ঠিক উলটো। ভারতবাসী বর্তমানে সংকীর্ণ চেতনা তথা অন্ধ সংস্কারের প্রাচীরে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে, যা প্রকৃত জ্ঞানচর্চার পরিপন্থী। বিশ্বের মাঝে নিজেদের প্রাণময়তাকে ছড়িয়ে দিতে বর্তমান দ্বিধাগ্রস্ত। অথচ প্রকৃত জ্ঞানী কখনোই নিজেকে আবদ্ধতার প্রাচীরে আবদ্ধ রাখতে পারেন না, তা উচিতও নয়। আপন গৃহকে নিয়ে যেতে হবে বহিঃপানে। বিশ্বের সকল স্থান থেকেই প্রয়োজনীয় জ্ঞান লব্ধ করতে হবে। দিনরাত সর্বক্ষণ সেই চেষ্টায় লিপ্ত থাকা প্রয়োজন। ক্ষুদ্র বা খণ্ড জ্ঞানের মাধ্যমে বসুধাকে কখনোই খণ্ড করে রাখাটা উচিত নয় বলেই কবি মনে করেছেন। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবি এ কথাই বোঝাতে চেয়েছেন।
