হলুদ পোড়া গল্পে বলাই চক্রবর্তী না থেকেও ঘটনাকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা গল্প অনুসারে লেখো। দ্বাদশ শ্রেণী
![]() |
প্রশ্ন:- 'হলুদ পোড়া" গল্পে বলাই চক্রবর্তী সশরীরে উপস্থিত না-থেকেও ঘটনাক্রমকে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা গল্পানুসারে আলোচনা করো।
উত্তর : গ্রামজীবনের ভৌতিক কুসংস্কারে মানুষের মধ্যে যে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তারই এক অনুপম মনস্তাত্ত্বিক গল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হলুদ পোড়া। ভৌতিক সংস্কারকে নিয়ে এ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক গল্প খুবই দুর্লভ। এই গল্পে বলাই চক্রবর্তী সশরীরে উপস্থিত না থেকেও শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনিকে প্রভাবিত করে গেছে। গল্পের শুরুতেই বলাই চক্রবর্তী খুন হয়েছে। কেউ বা কারা তাকে লাঠির আঘাতে মাথাটি আটচির করে গাঁয়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজাপুকুরের ধারে গজারি গাছের নীচে ফেলে যায়। বলাইয়ের এ মৃত্যুকে প্রায় সকলেই আড়াল-আবডাল থেকে সমর্থন করে। বলাই চক্রবর্তী খুন হওয়ার দিন তিনেকের মধ্যে আরও একজন খুন হয়, যার নাম শুভ্রা।
এই গৃহস্থ কন্যাকে বাড়ির পিছনের ডোবার ঘাটে কেউ বা কারা গলাটিপে মেরে রেখে যায়। দুটো খুনের মধ্যে আদৌ যোগাযোগ আছে কিনা—যখন
এ ভাবনাতে সবাই মশগুল ঠিক তখনই নবীনের স্ত্রী দামিনী এক খাপছাড়া অসুখে পড়ে। দামিনীর চিকিৎসার জন্য কুঞ্জ গুণিন নানান মন্ত্র ও তুকতাক করে দামিনীর শরীরের মধ্যে আশ্রয় নেওয়া অশরীরীকে হাজির করতে সক্ষম হয়। কুঞ্জের প্রশ্নের উত্তরে অশরীরী নিজের পরিচয় দিয়ে জানায়—সে শুভ্রা এবং বলাই খুড়ো তাকে খুন করেছে। পরপর ঘটে যাওয়া দুটি খুনের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ে আর কারও দ্বিধা থাকে না। বোঝা যায় কোনো অজ্ঞাত কারণে বলাই খুড়ো মৃত্যুর পর অপরের সাহায্য নিয়ে শুভ্রাকে খুন করেছে। এক্ষেত্রে আরও লক্ষণীয় যে শুভ্রার এই মৃত্যু ঘিরে অশরীরী শক্তি ভর করে এবং শেষে তার স্বীকারোক্তি—সে বলাই চক্রবর্তী এবং সে-ই শুভ্রাকে খুন করেছে। সামগ্রিক পর্যালোচনাতে এটাই লক্ষ করা যাচ্ছে যে, বলাই চক্রবর্তী
উপস্থিত না-থেকেও গল্পের নিয়ন্ত্রক হয়েছেন।
