হলুদ পোড়া গল্পের নবীনের চরিত্রটি আলোচনা করো। দ্বাদশ শ্রেণী
![]() |
প্রশ্ন:- ‘হলুদ পোড়া গল্পের নবীন চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম ছোটোগল্প ‘হলুদ পোড়া’। এই গল্পে গ্রামীণ অজ্ঞতা ও অন্ধবিশ্বাসের ওপর ভর করে ভৌতিক আবহে মানুষের মধ্যে যে বিকারগ্রস্ততা দেখা দেয়, তা লেখক সুনিপুণ দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলেছেন। এই গল্পের অন্যতম চরিত্র নবীন; যে, সম্পর্কে খুন হয়ে যাওয়া বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো। গল্পের প্রেক্ষাপটে তার চরিত্রের কিছু পরিচয় তুলে ধরা হল-গ্রাম্য কুসংস্কারের আবর্তে আবর্তিত : নবীন শিক্ষিত, কর্মসূত্রে শহরে থাকলেও গ্রামীণ কুসংস্কারের সাগরে হাবুডুবু খেয়েছে। তার স্ত্রী দামিনীকে যখন অশরীরী আর ভর করেছিল তখন সে ডাক্তার অপেক্ষা ওঝার ওপর বেশি আস্থা প্রকাশ করেছিল। যদিও সে শেষমেশ কৈলাশ ডাক্তারকে ডাকতে পাঠিয়েছিল।
সম্পত্তির প্রতি আকর্ষণ : বলাই চক্রবর্তীর নৃশংস হত্যার পর কাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী ছিল সে, তাই তার দখল নেওয়ার জন্য শিক্ষিত নবীন চল্লিশ টাকা মাহিনার চাকরি ছেড়ে শহর থেকে গ্রামে এসে বসবাস করতে শুরু করে।
ছলনার আশ্রয় : নবীনের চরিত্রের মধ্যে একটা ছলনাকে আশ্রয়ের মাধ্যমে।গ্রামবাসীদের সহানুভূতি আদায় করার চেষ্টা লক্ষ করা গিয়েছে। তার মধ্যে যতটা-না দুঃখ ও প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা ছিল, তার চেয়ে বেশি আগ্রহ ছিল উপস্থিত গ্রামবাসীদের সামনে মিথ্যা কান্নার অভিনয় করা। তাই সে কখনও কোঁচার কাপড়ের খুঁটে চশমার কাচ মুছতে মুছতে চোখও মুছতে থাকে।
আত্মসম্মানবোধ : নবীনের মধ্যে যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধ লক্ষ করা গেছে। সে শুধুমাত্র কাকার বিষয়সম্পত্তির প্রতি যে আগ্রহী ছিল তা নয় বরং লোকলজ্জার ভয়ে কাকার খুনীদের সন্ধান দেওয়ার জন্য পঞ্চাশ টাকা পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করে।
এ ছাড়া নবীন চরিত্রটি যে বৈষয়িক; তা বোঝা যায় যখন সে ওঝা কত টাকা নেবে জিজ্ঞেস করে। ছোটোগল্পের ছোটো পরিসরে এইভাবে নবীন চরিত্রটি লেখকের হাতে পড়ে সমকালীন সময়ের সমাজে হয়ে উঠেছিল ভীষণ উচ্ছ্বল একটি চরিত্র।
