বাসটা সরিয়ে দাও বক্তা কোন বাঁশটাকে সরিয়ে দেওয়ার আর্তির জানিয়েছেন ? এই আর্তির পিছনের কারণ আলোচনা করো । হলুদ পোড়া গল্প || দ্বাদশ শ্রেণী
![]() |
প্রশ্ন:; “বাঁশটা সরিয়ে দাও”–বক্তা কোন বাঁশটাকে সরিয়ে দেওয়ার আর্তি জানিয়েছে? এই আর্তির পিছনের কারণ আলোচনা করো।
উত্তর : উদ্ধৃত উক্তিটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া’ গল্পের অন্যতম চরিত্র ধীরেনের, যে সম্পর্কে শুভ্রার দাদা।তিন দিন আগে পরে গ্রামে যে দুজনের মৃত্যু হয়েছিল তাদের মধ্যে একজন শুভ্রা। খুন দুটিকে নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার মাঝে শুভ্রার অশরীরী আত্ম যখন দামিনীর শরীরে ভর করে তখন কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় শুভ্রার দাদা-বৌদিকে অনেকেই অশরীরী আত্মার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য নানান কাল্পনিক পরামর্শ দিতে থাকে। গ্রামের ক্ষেন্তি পিসি কাঁচা বাঁশের দু-দিক পুড়িয়ে অশরীরী আত্মাকে প্রতিহত করার কথা বলে। ধীরেনের স্ত্রী বাড়ি ও ডোবার ঘাটের মাঝে সেই বাঁশ পেতে রেখেছিল। এখানে ওই পেতে রাখা বাঁশটির কথাই বলা হয়েছে।
বাঁশ সরিয়ে দেওয়ার আর্তির কারণ : খুন হওয়ার একুশ দিনের মাথায় নবীনের স্ত্রী দামিনীর ওপর যখন অশরীরী আত্মা ভর করে এবং কুঞ্জ গুণিন যখন দামিনীর মুখ দিয়ে বলিয়ে নেয় যে, সে শুভ্রা এবং বলাই খুড়ো তাকে খুন করেছে—তখন বোনের এই কাল্পনিক কেলেঙ্কারির জন্য যুক্তিবাদী ধীরেনও নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে। প্রতিদিনের জীবন থেকে সে যেন নিজেকে
সরিয়ে নিতে থাকে। মনের মধ্যে ক্ষোভ এবং বিষাদ এতটাই প্রভাব ফেলে যে, মাঝে মাঝে সে নিজেই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। আর নয়তো তার কেমন যেন একটা কষ্ট হত। বোন শুভ্রার আত্মাকে নিজের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ করে দেবার জন্য ফেলে রাখা বাঁশ ডিঙিয়ে সে ডোবার মাঠের দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে ফিরে এসে অদ্ভুত বিকৃত গলায় তার নিজের নাম ধরে ডাক শুনে স্ত্রী শান্তি এসে দেখে তার কাপড়ে ও গেঞ্জিতে কাদা ও রক্তমাখা এবং চিবুক থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মাটিতে শোয়ানো বাঁশটুকু সে পার হতে পারছে না। তার মধ্যে তখন অশরীরী আত্মা ভর করেছে এবং তাকে নিয়েই সে বাড়িতে প্রবেশ করতে চায়; আর সেজন্যই সে তার পথের বাধা পোড়া বাঁশটিকে সরিয়ে নেওয়ার আর্তি জানিয়েছে।
