হলুদ পোড়া গল্প অবলম্বনে কুঞ্জের চরিত্রটি আলোচনা করো। দ্বাদশ শ্রেণী বাংলা।
![]() |
প্রশ্ন:- 'হলুদ পোড়া' গল্প অবলম্বনে কুঞ্জ চরিত্রটি আলোচনা করো।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন এক জীবন্ত প্রতিবাদ। মধ্যবিত্ত জীবনে জন্মগ্রহণ করে তার ঘুণধরা অবস্থাকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, তার সর্পিল গতিতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছিলেন। এই সমাজের ন্যাকামি আর জানি তার কাছে মনে হয়েছিল অসহ্য। তিনি চাইতেন এর ধ্বংস। ধ্বংসের সৃষ্টির সৌধ কীভাবে গড়ে তোলা যায় সে ভাবনা তাঁর মনে তখনও আসেনি। সেইজন্যই তাঁর লেখাতে দ্বন্দ্বের পরিণামে ধ্বংসের মাহাত্মই বেশি করে রূপায়িত হয়েছে। 'হলুদ পোড়া' গল্পে তিনি সমস্যার সমাধানের চেয়ে মধ্যবিত্তের বিকারগ্রস্ততাকেই বেশি করে তুলে ধরেছেন। কুঞ্জ চরিত্রটি যেন তাঁর এই চিন্তাভাবনাকে ত্বরান্বিত করতে অনুঘটকের কাজ করেছে।
দক্ষতা : কুঞ্জ একজন নামকরা ওঝা বা গুনিন। তার সম্মোহন শক্তি ছিল প্রবল। যার ফলে সে তীব্র আবেগ ও কল্পনাশক্তি দ্বারা অন্যের মনকে প্রভাবিত করতে পারত এবং পরিচালনাও করতে পারত। নবীনের স্ত্রী দামিনীকে সে এভাবেই শুভ্রাতে পরিণত করে তাকে দিয়ে বলিয়ে নিয়েছে বলাই চক্রবর্তী তাকে খুন করেছে।
জনপ্রিয়তা: জনপ্রিয়তা যে কুঞ্জের ভীষণভাবে ছিল তা প্রমাণিত হয়।তার গুণপনা দেখতে লোক যখন ভিড় জমাত। পরিস্থিতির জটিলতার কথা
তুলে মানুষকে ভয় পাইয়ে দিতে সে ছিল সিদ্ধহস্ত।
গুনিনের প্রভাব: আবার একইভাবে নিজের প্রভাবকে অতি উচ্চতায় নিয়ে যেতে তার জুড়ি মেলা ভার– “ভর সাঁঝে ভর করেছেন, সহজে ছাড়বেন না” কিংবা “কুঞ্জ মাঝির সাথে তো চালাকি চলবে না”–উক্তিগুলিই তার প্রমাণ।
সামাজিক অজ্ঞতা:- এহেন কুঞ্জ কিন্তু জানে এসব কিছুর পিছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি কিছু নেই; তাই কৈলাশ ডাক্তার এসে যখন তার মালসার আগুনে লাথি মেরে ফেলে দেয় কিংবা তাকে হাজত বাস করাবার হুমকি দেয় তখন কুঞ্জ সেখান থেকে সরে পড়ে। আবার অন্যভাবে বলা যায় লেখক তার গল্পের পরিমণ্ডল রচনার্থে এইরূপ চরিত্রের অবতারণা করেছেন।
