মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলুদ পোড়া গল্প অবলম্বনে ধীরেনে চরিত্রটি আলোচনা করো। হলুদ পোড়া || দ্বাদশ শ্রেণী - Online story

Sunday, 23 November 2025

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হলুদ পোড়া গল্প অবলম্বনে ধীরেনে চরিত্রটি আলোচনা করো। হলুদ পোড়া || দ্বাদশ শ্রেণী

 


প্রশ্ন::-  মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হলুদ পোড়া' গল্প অবলম্বনে ধীরেন চরিত্রটি আলোচনা করো।

উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠগল্পের অন্তর্গত একটি অন্যতম ছোটোগল্প হল 'হলুদ পোড়া'। গ্রামীণ ভৌতিক কুসংস্কারে আচ্ছন্ন বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তারই এক অনুপম মনস্তাত্ত্বিক গল্প হলুদ পোড়া'। এই গল্পের অন্যতম চরিত্র হল ধীরেন। আলোচ্য গল্পের প্রেক্ষাপটে তার চরিত্রের কতকগুলি বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। সেগুলি হল-
সমাজসংস্কারক : ধীরেন শিক্ষিত ও সচেতন। সে বুঝেছিল তাদের যে সমাজ; তার সংস্কার প্রয়োজন। জ্ঞানের বিকাশ ঘটানোর জন্য সে সাতচল্লিশখানা বই নিয়ে তার বাড়িতে লাইব্রেরি খোলে। এর পাশাপাশি এলাকার কিছু ছেলেকে নিয়ে সমিতি গঠন করে। উভয় ক্ষেত্রেই লক্ষ্য—সমাজের উন্নতি। ধীরেনের এই চেষ্টা কিন্তু সফল হয়নি। সময় যত গড়িয়েছে ধীরেনের এই চেষ্টা ফিকে হতে শুরু করে। তিনশো বই নিয়ে লাইব্রেরি এবং তরুণ সমিতিও আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়।
যুক্তিবাদের প্রতীক : ধীরেন যেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, তমসাবৃত সমাজে হঠাৎ আলোর ঝলকানি। গল্প যতই এগিয়েছে ধীরেনের এই মনোভাব স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছে। ফিজিক্স অনার্স পাস করে সে গায়ের স্কুলে ভূগোল পড়ায়। বিজ্ঞানের ছাত্র হওয়ার সুবাদে সে বিভিন্ন বইপত্র পড়ে যেটুকু চিকিৎসাবিদ্যা শিখেছিল তা দিয়ে গণ্ডগ্রামের হতদরিদ্র মানুষদের পদ্ধতি মেনে ছোটোখাটো চিকিৎসা করত। তার যুক্তিবাদী মনোভাবের কারণেই সে তার বন্ধুস্থানীয় নবীনকে তার স্ত্রীর অসুস্থতার সময় ওঝার বদলে ডাক্তার ডাকার পরামর্শ দেয়। শুধু তাই নয়, রোগের উপসর্গ বুঝতে পেরেও শুধুমাত্র পাস করা ডাক্তার নয় বলে সে নবীনের স্ত্রীর চিকিৎসাও করেনি।

কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ : ধীরেন শুভ্রার দাদা, তাই গর্ভবতী শুভ্রা যখন সন্তান প্রসবের জন্য তাদের বাড়ি এসেছিল, তখন সে তার সাধ্যমতো চেষ্টা
করে। পুকুরঘাটে নামতে বোনের যাতে অসুবিধা না হয়, সে তালগাছের গুঁড়ি দিয়ে ঘাট বেঁধেছিল।
জনসেবা ও আত্মসম্মানবোধ : ধীরেন তার সমাজকে ভালো করেই বুঝত। তাই সে গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলো অসুস্থ হলে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াত। সীমিত ক্ষমতার মধ্যে সে সাধারণ রোগজ্বালার চিকিৎসা করত এবং চারআনা আটআনা ফি নিয়ে ওষুধপথ্যও দিত। এসব সত্ত্বেও ধীরেন অন্ধকারাচ্ছন্ন গ্রামীণ সংস্কারের আবর্তে আবর্তিত
হয়েছে। তার প্রমাণ অধিক সন্তানের জন্ম দেওয়া ও তার ওপর অশরীরী আত্মা ভর করেছে সে-কথা ভেবে কুসংস্কারের চোরাবালিতে তার আটকে পড়া।