দুটো খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার' । এখানে কোন দুটো খুনের কথা বলা হয়েছে সম্পর্ক আবিষ্কার করার কথা পর্যালোচনা কর || দ্বাদশ শ্রেণি || ফোর সেমিস্টার - Online story

Thursday, 13 November 2025

দুটো খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার' । এখানে কোন দুটো খুনের কথা বলা হয়েছে সম্পর্ক আবিষ্কার করার কথা পর্যালোচনা কর || দ্বাদশ শ্রেণি || ফোর সেমিস্টার

 



প্রশ্ন:- “দুটি খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করার জন্য প্রাণ সকালের ছটফট করে”–কোন্ দুটি খুনের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কারের কথা বলা হয়েছে? সম্পর্ক আবিষ্কার করার জন্য সকলের প্রাণ ছটফট করার কারণ পর্যালোচনা করো।

উত্তর : যে দুটি খুনের মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার : উদ্ধৃত অংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'হলুদ পোড়া' নামক গল্পসংকলনের প্রথম গল্প ‘হলুদ পোড়া থেকে গৃহীত। সে বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি গাঁয়ে তিন দিন আগে পারে দু-দুটো খুন হয়। প্রথমে খুন হয় মাঝবয়সী জোয়ান ও অত্যাচারী পুরুষ বলাই চক্রবর্তী এবং পরে খুন হয় আপাত নিরীহ ষোলো-সতেরো
বছরের এক রোগা ভীরু মেয়ে শুভ্রা। গ্রামবাসী এই দুই খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কারের চেষ্টায় ছটফট করছিল।
খুন দুটির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টার কারণ : আপাত শান্ত গাঁয়ে বিগত বিশ-ত্রিশ বছরের মধ্যে কেউ সেভাবে সেখানে জখম পর্যন্ত হয়নি—এমন জায়গায় তিন দিন আগে পরে দু-দুটো খুনের ঘটনা গ্রামবাসীকে এমনিতেই নাড়া দিয়েছিল। তবে খুন হওয়া দুজনের মধ্যে একজন পুরুষ অপরজন নারী। এখানেই লুকিয়ে আছে সকলের প্রাণ ছটফটানি কারণ। সাহিত্য সমাজের দর্পণ। সামাজিক নানা ভালো-মন্দ, অপসংগতি, সুসংস্কার সব কিছুই সাহিত্যে প্রতিকলিত হয় বলা চলে, লেখকরা তা করে থাকেন। এক্ষেত্রে লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় মধ্যবিত্ত জীবনের বিকৃতি ও কৃত্রিমতা—যা তাঁর কাছে মনে হত অসহ্য সেগুলিকেই তুলে ধরেছেন তাঁর গল্পে। তিনি এই বিকৃতিকে মনেপ্রাণে ধ্বংস করতে চাইতেন কিন্তু পথ না-পেয়ে এই বিকৃতিকে বড়ো করে দেখাতেন, যাতে করে সমাজ তার আপন ক্ষতের মলম আপনিই জোগাড় করে নিতে পারে। আসলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় যেন এই গল্পে মধ্যবিত্ত মননকে ব্যঙ্গের কশাঘাত করেছেন— তাই তাদের মধ্যে দুটো খুনের মধ্যে সম্পর্ক কী? – এই চিন্তাভাবনার লহর তুলেছেন এবং তিনি তাতে সফলও হয়েছেন।

প্রশ্ন:- একটুখানি বাস্তব সত্যের খাদের অভাবে নানাজনের কল্পনা ও অনুমানগুলি গুজব হয়ে উঠতে উঠতে মুষড়ে যায়।” বাস্তব সত্যের
খাদ' বলতে গল্পে কী ইঙ্গিত করা হয়েছে? 'বাস্তব সত্যের খাদ' কীভাবে কল্পনা ও অনুমানগুলিকে গুজব হয়ে ওঠা থেকে বিরত করেছিল –তা গল্প অবলম্বনে বিবৃত করো।

উত্তর : বাস্তব সত্যের খাদের কল্পনা: উদ্ধৃত অংশটি ভৌতিক সংস্কারকে নিয়ে লেখা।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘হলুদ পোড়া' নামক মনস্তাত্ত্বিক গল্প থেকে গৃহীত। ‘বাস্তব সত্যের খাদ’ কথাটি লেখক ব্যবহার করেছেন তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন গ্রামবাসী পরপর ঘটে যাওয়া বলাই চক্রবর্তী ও শুভ্রার খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করে মুখরোচক গুজব বানানোর চেষ্টায় মশগুল। কিন্তু এটাও সত্য যে, বলাই চক্রবর্তী ও শুভ্রার কবে সামনাসামনি দেখা হয়েছিল সেটা গ্রামবাসী কেউ-ই স্মরণ করতে পারছিল না। তাই গুজবটার দানা বাঁধাতে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় এই সামান্য সত্যটুকু।

কল্পনা ও অনুমানকে গুজব হয়ে ওঠা থেকে বিরত করতে 'বাস্তব সত্যের খাদ' : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমাজের নানা ঘটনা ও চরিত্রের মধ্যে যে রহস্য লুকিয়ে থাকে তা উদ্ঘাটনে ছিলেন অত্যন্ত সিদ্ধহস্ত। গ্রামজীবনে ভৌতিক কুসংস্কারে বিভিন্ন মানুষের মধ্যে যে বিচিত্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় তারই এক অনুপম মনস্তাত্ত্বিক গল্প আমাদের পাঠ্য গল্পটি।
ভৌতিক সংস্কারের ওপর আলোকপাত করে লেখা এমন গল্প বাংলা সাহিত্যে সত্যিই দুর্লভ। অত্যাচারী বলাই চক্রবর্তীর নৃশংসভাবে খুন হয়ে যাওয়ার পর গাঁয়ে হইচই হলেও বিশেষভাবে কেউ বিস্মিত হয়নি। তবে গৃহস্থ ঘরের সাধারণ মেয়ে শুভ্রার খুন হওয়ার পর গাঁ সুদ্ধ লোক যেন কেমন অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। তবে যেহেতু একটি পুরুষ ও একটি যুবতী নারী খুন হয়েছে তাই গ্রামবাসী দুটি খুনের মধ্যে একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করার জন্য প্রার উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠে কিন্তু তাদের চিন্তায় যখন উঠে আসে যে, বলাই চক্রবর্ত শুভ্রাকে কবে শুধু চোখের দেখা দেখেছিল—তা গাঁয়ের কেউ মনে করতে পারে না। ঠিক তখনই তাদের কল্পনা ও অনুমানগুলি গুজব হয়ে উঠতে উঠে মুষড়ে পড়ে। এ যেন কুসংস্কারাচ্ছন্ন অন্ধকারের মধ্যে সামান্যতম আলোর দ্যুতি। এই সত্যটিকে লেখক ‘বাস্তব সত্যের খাদ' বলে অভিহিত করেছেন।