হলুদ পোড়া গল্পের বিষয় সংক্ষেপ || দ্বাদশ শ্রেণী || 4th সেমিস্টার - Online story

Friday, 14 November 2025

হলুদ পোড়া গল্পের বিষয় সংক্ষেপ || দ্বাদশ শ্রেণী || 4th সেমিস্টার

 



হলুদ পোড়া মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

হলুদ পোড়া গল্প
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষয়সংক্ষেপ 


উত্তর :  গল্পের শুরুটা খুব নাটকীয়। মৃত্যুর আতঙ্ক নিয়ে গল্পের শুরু—“সে-বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিন আগে-পরে গাঁয়ে দু'দুটো খুন হয়ে গেল। একজন মাঝবয়সী জোয়ান মদ্দ পুরুষ এবং ষোল-সতের বছরের একটি রোগা ভীরু মেয়ে।” এই ঘটনাদ্বয়কে কেন্দ্র করে লোকজীবনে নানা গালগল্পের সৃষ্টি হয়। দুটো খুনের মধ্যে একটা কাল্পনিক যোগাযোগ ঘটিয়েও নানা রসাল কাহিনি সৃষ্টি হতে পারে এবং মুখে মুখে নানা জল্পনা-কল্পনা দেখা দিতে পারে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল।
প্রথমে খুন হয়েছিল বলাই চক্রবর্তী, তার তিন দিন পরে খুন হল শুভ্রা। এই খুনের রহস্য নিয়ে সবাই যখন ব্যস্ত তখন হঠাৎই বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো
নবীনের স্ত্রী দামিনী এক সন্ধেবেলা উঠোনে আছড়ে পড়ে গেল। হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে তার দাঁতে দাঁত লেগে গেল। গ্রামের বুড়ো পঙ্কজ ঘোষাল তার চিকিৎসার জন্য ভূত ঝাড়ানোর ওঝা কুঞ্জ মাঝিকে ডাকতে বলল। কিন্তু গ্রামের ধীরেন ডাক্তার প্রবল আপত্তি জানাল। সে পাস না করা ডাক্তার হলেও ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে বি এস সি পাস করে স্থানীয় স্কুলে শিক্ষকতা করে। সে ভূত প্রেতে বিশ্বাস করে না। সে নবীনকে বলল, “এটা অসুখ, অন্য কিছু নয়। লেখাপড়া শিখেছ, জ্ঞান-বুদ্ধি আছে, তুমিও কি ব'লে কুঞ্জকে চিকিৎসা জন্য ডেকে পাঠাবে?” সে কৈলাস ডাক্তারকে ডাকার পরামর্শ দিল।
কৈলাস ডাক্তার আসবার আগেই কুঞ্জ মাঝি এসে দামিনীর ভূত ঝাড়াবার অমানুষিক ক্রিয়াকাণ্ড শুরু করে দিল। দামিনীর আর্তনাদে ধীরেন ভূত ঝাড়াবার প্রক্রিয়ায় আপত্তি জানাল। কিন্তু কেউ তার কথায় কর্ণপাত করল না। ওঝার নির্যাতন এবং নিপীড়নে বেহুস দামিনী স্বীকার করল সে শুভ্রা, বলাই খুড়ো তাকে খুন করেছে। কৈলাস ডাক্তার এসে পড়ায় দামিনী সে-যাত্রায় কুঞ্জর হাত থেকে রেহাই পেল। কিন্তু অচেতন অবস্থায় দামিনী যে স্বীকারোক্তি করেছিল সেটাই বিভিন্নভাবে নানা মানুষের মনে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করল। দামিনীর ওই স্বীকারোক্তি যে অমূলক এটাও কারোর অজানা নয়। যে বলাই চক্রবর্তী তিন দিন আগে খুন হয়েছিল সে কীকরে তিন দিন পরে শুভ্রাকে খুন করল। এমনকি বলাই ভূত হয়েও সেটা করতে পারে না। “কারণ, মরার এক বছরের মধ্যে সেটা কেউ পারে না, ওই সময়ের মধ্যে শ্রাদ্ধ-শাস্তি না হলে তবেই সোজাসুজি মানুষের ক্ষতি করার ক্ষমতা জন্মায়।” একমাত্র একজনকে ভর করে তার মধ্যস্থতায় বলাই শুভ্রাকে খুন করতে পারে এবং সেটাই হয়েছে। অনেক কান ঘুরে এই কথাগুলিই ধীরেনের কানে গেল। ধীরেন ভাবতেই পারে না যে, বলাই তার রক্তমাংসের হাত দিয়ে শুভ্রাকে খুন করেছে। অথচ এই ভাবনাই তাকে অন্যমনস্ক করে দেয়, অন্য কোনো বিষয়ে ওর মন বসে না। এই গভীর অনুভূতির ফলে তার মনে তীব্র বিকার দেখা দেয়। তার বশীভূত হয়ে সে মনে মনে একটা তীব্র উত্তেজনা অনুভব করে। তাকে স্কুল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। তার এই অনুভূতিটা একেবারে অচেতন স্তরে চলে যায়। সেজন্য মাঝে মাঝে তার মাথাটা কেমন ঘুরে যায়। সে বুঝতে পারে, নিয়মিত ভাবে স্কুলে প্রতিদিন পড়ানোর ক্ষমতা তার নেই। বাড়ির মধ্যেও একটা ভৌতিক আতঙ্ক। ছেলেমেয়েরা বন্ধ ঘরে বসে আলোচনা করে “ছোটপিসি ভূত হয়েছে”। ঘরের মধ্যেও কারণে অকারণে স্ত্রী শান্তি ভয় পেয়ে আঁতকে ওঠে। প্যাঁচার ডাক শুনলেই ভয়ে গোঙাতে গোঙাতে বমি করে। রাত্রি বেলার উঠোনে পোড়া বাঁশ পেতে রাখে, যাতে কোনো অশরীরী আত্মা সে বাঁশ ডিঙিয়ে বাড়ির লোকের ক্ষতি করতে না পারে।
সন্ধ্যা নামলেই খাওয়াদাওয়া মিটিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে শান্তি। বিকেলে আজকাল সে মাছ রান্নাও করে না, এঁটোকাঁটা নাকি অশরীরী আত্মাকে আকর্ষণ করে। অন্যদিকে ধীরেনের মনে চলে অনা ভাবনা। সে জানে জীবিতের সঙ্গ্যে মৃতের সংযোগ স্থাপনের সবচেয়ে প্রশস্ত সময় সন্ধ্যা। সে চায় শুভ্রার সঙ্গে কথা বলতে। তাই দেরি না-করে শুভ্রাকে কথা বলার সুযোগ করে দিতে সন্ধের আবছা আলোয় চোরের মতো ভিটে থেকে নেমে বাঁশ ডিঙিয়ে পা টিপে টিপে ডোবার মাঠের দিকে চলে যায়। তারপর ফিরে আসে সম্পূর্ণ
অপ্রকৃতিস্থ হয়ে। পেতে রাখা বাঁশের ওপারে দাঁড়িয়ে হিংস জন্তুর চাপা গর্জনের মতো গম্ভীর গলায় ধীরেন তার নিজের নাম ধরে ডাকাডাকি করে। বাঁশ ভিভিয়ে ঘরে উঠতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। এইসব দেখে শান্তির সাপের হয়। তার আকাশ-চেরা তীক্ষ্ণ আর্তনাদে পাড়ার লোক আসে
কুঞ্জ ওঝা আসে ধীরেনে ভূত ঝরতে। মন্ত্র পড়ে, চারদিকে জল ছিটায়, আগুনে কাঁচা হলুদ পুড়িয়ে নাকের কাছে ধরে। কুঞ্জর এইসব নিপীড়ন আর নির্যাতনের ফলে ধীরেন বলে সে বলাই চক্রবর্তী শুভ্রাকেই সে খুন করেছে।