"চারিদিকে হইচই পড়ে গেল"। কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারিদিকে হৈচৈ করে গেল।? || দ্বাদশ শ্রেণী || ফোর্থ সেমিস্টার
![]() |
প্রশ্ন. “সে-বছর কার্তিক মাসের মাঝামাঝি তিন দিন আগে-পরে গাঁয়ে দু' দুটো খুন হয়ে গেল।”–কোন্ দুজন, কীভাবে খুন হয়েছিল ? তাদের দুজনের খুন নিয়ে এলাকাবাসীদের প্রতিক্রিয়া সংক্ষেপে বিবৃত করো।
অথবা, “চারিদিকে হৈচৈ পড়ে গেল”— কোন্ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চারিদিকে হইচই পড়ে যায়?উত্তর : যারা, যেভাবে খুন হয়েছিল : উদ্ধৃত অংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্পের অন্তর্গত ‘হলুদ পোড়া' নামক একটি বিশিষ্ট গল্প থেকে গৃহীত।
ভৌতিক সংস্কারকে নিয়ে লেখা মনস্তাত্ত্বিক এই গল্পে যে দুজনের খুনের কথা বলা হয়েছে তাদের মধ্যে প্রথম জন হল—মাঝবয়সি জোয়ান-মদ্দ পুরুষ যার নাম বলাই চক্রবর্তী; সমাজে যে অত্যাচারী বলেই পরিচিত। তাকে কেউ বা কারা খুব সম্ভবত লাঠির আঘাতে মাথাটা আটচির করে মৃত্যু নিশ্চিত করে গাঁয়ের দক্ষিণে ঘোষেদের মজা পুকুরের ধারে ফেলে গিয়েছিল। আর অন্যজন হল গৃহস্থ ঘরের সাধারণ ঘরোয়া মেয়ে, বছর দেড়েকের বিবাহিতা ও সন্তানসম্ভবা আপাত নিরীহ মেয়ে শুভ্রা; যাকে কেউ বা কারা গলাটিপে মেরে বাড়ির পিছনে ডোবার ঘাটের কাছে ফেলে যায়। উক্ত দুজনের খুনে এলাকাবাসীদের প্রতিক্রিয়া : তাদের দুজনের মধ্যে প্রথম জন বলাই চক্রবর্তীর খুন হওয়াকে কেন্দ্র করে চারিদিকে বিস্তর হইচই পড়ে গেলেও আপামর লোকজন খুব একটা বিস্মিত হয়নি, বরং বলা যায় যে বলাই চক্রবর্তীর এরূপ অপমৃত্যু বোধ করি আশেপাশের দশটা গাঁয়ের লোক মনে মনে কামনাই করেছিল। আর অন্যজন অর্থাৎ গৃহস্থ ঘরের মুখচোরা, বছর দেড়েকের বিবাহিতা ও সন্তানসম্ভবা শুভ্রার খুন হওয়া নিয়ে হইচই কম হলেও মানুষের বিস্ময় ও কৌতূহল ছিল অন্তহীন। যে মেয়েটিকে গাঁয়ের লোক চোখের সামনে আর দশটা মেয়ের মতো বেড়ে উঠতে দেখেছে, বিয়ে হয়েছে, শ্বশুর বাড়ি গিয়েছে এবং রেয়াজ অনুযায়ী সন্তান প্রসবের জন্য বাপের বাড়ি ফিরে এসেছে প্রত্যক্ষ করেছে; পাশের বাড়ির মেয়েরা পর্যন্ত যার মধ্যে
খাপছাড়া কোনো লুকোনো জিনিস খুঁজে পায়নি – এহেন মেয়েটিকে গলাটিপেমেরে রেখে যাবে কেউ বা কারা—তা ভেবে উঠতে না-পেরে গাঁ সুদ্ধ লোক অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল। তবে অজপাড়া-গাঁতে দুটো খুনের মধ্যে একটা কাল্পনিক যোগাযোগ ঘটিয়ে নানা রসাল কাহিনি সৃষ্টি হবে এবং মুখে মুখে জল্পনা-কল্পনা দেখা দেবে সেটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
