যারা দরিদ্র, যারা নিরক্ষর, যারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, তাদের কথা ভুলিস না । বক্তা কে? স্বর্ণপর্ণী গল্পে বক্তার পরিচয় দাও। - Online story

Friday, 31 October 2025

যারা দরিদ্র, যারা নিরক্ষর, যারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, তাদের কথা ভুলিস না । বক্তা কে? স্বর্ণপর্ণী গল্পে বক্তার পরিচয় দাও।

 



প্রশ্ন:--'যারা দরিদ্র, যারা নিরক্ষর, যারা মাথা উঁচু করে চলতে পারে না, তাদের কথা ভুলিস না। —উদ্ধৃতাংশটির বক্তা কে? 'স্বর্ণপর্ণী' গল্পটি পড়ে বক্তাকে তোমার কেমন বলে মনে হয়েছে লেখো।

অথবা, 'বাবার এই কথাগুলো আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল।——বাবা”-র পরিচয় দাও। এখানে কোন্ ‘কথাগুলো'-র কথা বলা হয়েছে?
উত্তর-- উদ্ধৃতাংশটির বক্তা হলেন সত্যজিৎ রায়ের ‘স্বর্ণপর্ণী’ রচনার কেন্দ্রীয় চরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা গিরিডির অপ্রতিদ্বন্দ্বী আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক প্রোফেসর ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু।
|| প্রোফেসর ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর আয়ুবের্দিক চিকিৎসার সুবাদে তাঁকে গিরিডির লোকেরা ধন্বন্তরি বলতেন। তিনি জীবনে যথেষ্ট উপার্জন করেছেন, তবে সাধ্য অনুযায়ী করেননি। কারণ পেশাদারি চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি সারাজীবন বহু দরিদ্র রোগীর চিকিৎসা 
করেছেন। তাঁর মতে ক্ষমতা থাকলেই অনেক উপার্জন করতে হবে তা নয়। সচ্ছল জীবনযাপনের জন্য অর্থ উপার্জনের মাধ্যমে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়; তবে তার চেয়ে বেশি আনন্দ ও সার্থকতা মেলে; যাদের কোনো সংস্থান নেই, যারা সারাজীবন দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, তাদের জন্য কিছু করতে পারলে। তিনি শিক্ষার সমগ্রতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তাই ছেলে বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র হলেও, তাঁকে শিল্প, সাহিত্য, দর্শন প্রভৃতি বিষয়ে পড়াশোনায় পরামর্শ দেন। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রয়োজন— ছেলের এই মতকে ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষটি মেনে নেন।
'চরকসংহিতা'-র স্বর্ণপর্ণীর প্রসঙ্গে তাঁর জ্ঞান আয়ুর্বেদশাস্ত্রে ত্রিপুরেশ্বরের ব্যুৎপত্তিকে মনে করিয়ে দেয়। অথচ সাধুর কাছে এই জীবনদায়ী ওষুধের সন্ধান পেয়েও তিনি নিজের শরীরের অবস্থা ও কসৌলির দূরত্ব বিবেচনা করে ছেলেকে তা সংগ্রহে বাধা দিয়েছেন। অসুস্থতা, মৃত্যু— জীবনের এই স্বাভাবিক পরিণতিগুলি সহজে গ্রহণ করার ক্ষমতা তাঁর মধ্যে ছিল। সবদিক বিচার করে এই সৎ, আদর্শবাদী, নির্লোভ, মহৎপ্রাণ মানুষটিকে এক অনন্য চরিত্রের অধিকারী বলেই মনে হয়।