'হাঁড়িতে ভাত ফোটা শব্দটা শুধু সেই মুহূর্তে মাত্র জীবন্ত ব্যাপার'- প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভাত ফোটা শব্দটিকে একমাত্র জীবন্ত ব্যাপার বলার তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর। কোনি গল্প || দশম শ্রেণী
প্রশ্ন:- "‘হাঁড়িতে ভাত ফোটা শব্দটা শুধু সেই মুহূর্তে মাত্র জীবন্ত ব্যাপার – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভাত ফোটার শব্দা-টিকে একমাত্র জীবন্ত ব্যাপার বলার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
উত্তর- ঔপন্যাসিক মতি নন্দীর ‘কোনি' উপন্যাসে সাঁতার হিসেবে কোনির উত্থানের পিছনে যে দুজনের অবদান সবচেয়ে বেশি তাদের একজন যদি হয় ক্ষিতীশ সিংহ তবে অন্যজন অবশ্যই কোনির বড়দা কমল। সে ভালো সাঁতারু ছিল, কিন্তু বাবার অকালমৃত্যুতে সংসারের ভার তার কাঁধে এসে পড়ায় সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন তার কাছে অধরাই থেকে যায়। কমলের ইচ্ছা বোন কোনিকে ভালো সাঁতার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
তাই প্রশিক্ষক ক্ষিতীশের সামনে কোনিকে প্রেরণা জোগাতে তার কাছ থেকে কথা আদায় করতে চায়। এমন সময়ে কোনির অবস্থা ও পরিস্থিতি বোঝাতে আলোচ্য উদ্ধৃতির অবতারণা হয়েছে।
তাৎপর্য বিশ্লেষণ:- ক্ষিতীশ কমলের মনে তার স্বপ্নপূরণের আশা জাগিয়েছিলেন। আর এতেই যক্ষ্মা রোগগ্রস্ত কমল অন্ধকারময় জীবনে সামান্যতম আলো যেন দেখতে পায়। ক্ষিতীশকে জিজ্ঞাসা করে কোনির পক্ষে ভালো সাঁতার হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। আত্মবিশ্বাসী ক্ষিতীশ তাকে জানান ইচ্ছাশক্তি আর চেষ্টায় সেটা
সম্ভব হতে পারে। ক্ষিতীশের কথায় কমল যেন ধ্বংসের মাঝেও সৃষ্টির আশা দেখতে পায় এবং কোনিকে আশীর্বাদ করে অনেক বড়ো হওয়ার কথা বলে। কোনিও দাদাকে তার স্বপ্নপূরণের কথা প্রকাশ করে। এর পরেই সেই অভাবদীর্ণ এঁদোগলির ভিতরে একচিলতে ঘরের সকলেই, তাদের নিজের নিজের স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায়। সেই দরিদ্র নিষ্প্রাণ মানুষগুলির কাছে তখন একমাত্র জীবন্ত বলে মনে হয়েছিল হাঁড়িতে ভাত ফোটার শব্দ, কারণ তাদের সমস্ত স্বপ্নের মধ্যে ওই একমুঠো ভাত ফোটার শব্দই ছিল বাস্তবের পদধ্বনি।
