দাওয়াটি যেন স্টেজ। কোন দাওয়ার কথা বলা হয়েছে? ঘটনাটি ব্যাখ্যা করো। হলুদ পোড়া গল্প|| দ্বাদশ শ্রেণী || ফোর সেমিস্টার
![]() |
প্রশ্ন:- “দাওয়াটি যেন স্টেজ,”- কোন্ দাওয়ার কথা বলা হয়েছে?দাওয়াটিকে লেখক স্টেজের সাথে তুলনা করেছেন কেন তা ঘটনাক্রম অবলম্বনে বর্ণনা করো।
উত্তর : দাওয়াটির বর্ণনা : উক্তিটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হলুদ পোড়া’ থেকে সংগৃহীত। সদ্য খুন হয়ে যাওয়া বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো নবীনের স্ত্রী দামিনীর ওপর অশরীরী আত্মা ভর করে ধীরেন ডাক্তার যাকে খাপছাড়া অসুখ বলেছে। এই আত্মা ভর করা বা খাপছাড়া অসুখ দূর করতে আসে এলাকার নামকরা গুনিন কুঞ্জ সে এসেই উপস্থিত উৎসুক প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে বলে; “ভর সাঁঝে ভর করেছেন, সহজে ছাড়বেন না।” তারপর সে সকলকে দাওয়া থেকে উঠোনে নামায় এবং মন্ত্র পড়ার সাথে সাথে জল ছেটাতে থাকে। দাওয়ারই একটা খুঁটিতে দামিনীর এলো চুল শক্ত করে বেঁধে দেয়। নবীনের এই দাওয়ার কথা বলা হয়েছে।
স্টোজের সঙ্গে তুলনা : স্টেজ বা মধ্যে প্রধানত কোনো নাটক বা দৃশ্য অভিনীত হয় এবং স্বাভাবিকভাবে নাটক দেখাকে কেন্দ্র করে দর্শকদের সেক্ষেত্রে আগ্রহের অন্ত থাকে না। এক্ষেত্রেও নবীনের দাওয়ায় তার স্ত্রীকে নিয়ে অশরীরী আত্মা ভর করার অজুহাতে কুষ্ণ যে
কাণ্ডকারখানা বাঁধিয়েছিল তা নাটকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। কুঞ্জু গুণিন ইতিমধ্যে দামিনীর চুল দাওয়ার খুঁটিতে বেঁধে দিয়েছিল। এখন সে এক পা সামনে এগিয়ে পাশে সরে, পিছু হটে, সামনে পিছনে দুলে দুলে দুর্বোধ্য মন্ত্র আওড়াতে থাকে। মালসাতে আগুন করে তাতে শুকনো পাতা, শিকড় ইত্যাদি পোড়াতে থাকে যার উৎকট গন্ধে দামিনীর আর্তনাদ ও ছটফটানি ধীরে ধীরে।কমে আসে এবং সে বোজা বোজা চোখে কুঞ্ঝর দিকে নিস্পন্দ হয়ে তাকিয়ে থাকে। তখন কুঞ্জ একটা হলুদ পুড়িয়ে দামিনীর নাকের কাছে ধরলে তার সর্বাঙ্গে শিহরন বয়ে যায়। তখন কুঞ্জ তাকে “কে তুই? বল, তুই কে?” প্রশ্ন করলে সে বলে—“আমি শুভ্রা গো, শুভ্রা।” এবং তাকে সে বলাই চক্রবর্তী খুন করেছে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাওয়ার চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকাত্রিশ-পঁয়ত্রিশ জন নারী-পুরুষ কুঞ্জুর এই অশরীরীকে নিয়ন্ত্রণের দৃশ্য দেখতে।থাকল। কুঞ্জ যেন তার আমদানিকৃত জ্ঞানবুদ্ধির অতীত রহস্যকে সহজবোধ্য
করে যে উপস্থাপন করছে; তা ভয়-ডর ভুলে সকলেই প্রত্যক্ষ করতে থাকে—যা জ্ঞানবুদ্ধির অতীত; দাওয়া যেন নাটকের এক স্টেজে পরিণত হয়।
প্রশ্ন:; “আমায় মেরো না।”—প্রসঙ্গ উল্লেখ করো। বক্তার এরূপ করুন আর্তির কারণ আলোচনা করো।
উত্তর : প্রসঙ্গ : প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সমাজের নানা ঘটনা ও চরিত্রের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহস্য উদ্ঘাটনে ছিলেন তৎপর। মনোবিশ্লেষণের যে তীক্ষ্ণতার সব জন্য তিনি প্রসিদ্ধ তার বেশ কিছু নিদর্শন আমাদের পাঠ্য ‘হলুদ পোড়া’ গল্পে আছে। পরপর দুটো খুন হয়ে যাবার পর গ্রামবাসীদের মনোজগতের রহস্য লেখক এ গল্পে উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন। গল্পে নবীনের স্ত্রী দামিনীর ওপর অশরীরী আত্মা ভর করে। এলাকার নামকরা গুণিন কুঞ্জু তা দূর করতে আসে এবং শুরু হয় সম্মোহিনী বিদ্যার সাথে শারীরিক অত্যাচার। সেইসময় যন্ত্রণাকাতর দামিনীর মুখ দিয়ে শুভ্রার আত্মা এ কথা বলে।
করুণ আর্তির কারণ : বক্তা দামিনীকে ভরসন্ধ্যাতে অশরীরী আত্মা ভর করে, ফলে সে উঠোনে আছড়ে পড়ে এবং হাত-পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে তার দাঁতে দাঁত লেগে যায়। প্রতিবেশীরা কলশি কলশি জল ঢেলে তার মূর্ছা ভাঙে। কিন্তু মূর্ছা ভাঙলে দেখা যায় সে অর্থহীন দৃষ্টিতে সবার দিকে তাকাচ্ছে, আপনমনে হাসছে ও কাঁদছে এবং যারা ধরে রাখছিল তাদের সে আঁচড়ে-কামড়ে পালাবার চেষ্টা করছে। তারপর সেখানে এসে হাজির হয় এলাকার নামকরা গুণিন কুঞ্জ। কুঞ্জ এসেই তার গুণপনা শুরু করে দেয়। প্রথমে সে সকলকে দাওয়া থেকে নামিয়ে দেয় এবং মন্ত্র উচ্চারণ করতে করতে জল ছেটাতে থাকে এবং দামিনীর এলোচুল শক্ত করে দাওয়ার খুঁটিতে বেঁধে ফেলে। এভাবে বেঁধে ফেলাতে তার নড়ার শক্তি থাকে না। এরপর সে মালসাতে আগুন করে শুকনো পাতা, শিকড় ইত্যাদি পোড়াতে থাকে যার উৎকট গন্ধে চারিদিক ভরে যায়। দামিনী আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং কুঞ্ঝর দিকে নিস্পন্দ হয়ে তাকিয়ে থাকে। সে সময়ে কুঞ্জা একটা হলুদ পুড়িয়ে দামিনীর নাকে ধরে—তার শরীরে শিহরন বয়ে যায় এবং কুঞ্জর "কে তুই?” প্রশ্নের।উত্তরে সে বলে “আমি শুভ্রা গো..... আমায় মেরো না।” কুঞ্জের নিরন্তর অত্যাচারে ক্লান্ত দামিনী এমন উক্তি করেছিল।
