ধীরেন আর্তনাদ করে উঠল। ধীরেনের আর্তনাদের কারণ কি? হলুদ পোড়া || গল্প দ্বাদশ শ্রেণী - Online story

Wednesday, 19 November 2025

ধীরেন আর্তনাদ করে উঠল। ধীরেনের আর্তনাদের কারণ কি? হলুদ পোড়া || গল্প দ্বাদশ শ্রেণী

 


প্রশ্ন:-“ধীরেন আর্তনাদ করে উঠল”—–ধীরেনের আর্তনাদের কারণ কী? এই আর্তনাদের মধ্য দিয়ে ধীরেনের কীরূপ মানসিকতা ফুটে উঠেছে?

উত্তর : হলুদ পোড়া গল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অলৌকিকতার মোড়কে মানুষের অবচেতন মনের নানান পরিসর গল্পে ফুটিয়ে তুলেছেন। মনোবিকারতত্ত্বের বৃহত্তর পরিসর এখানে খুবই অল্প আয়তনের মধ্যে ধরা দিয়েছে।
এ গল্পে ধীরেনকে বিজ্ঞানমনস্ক, যুক্তিবাদী, সমাজসংস্কারী শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিকে দেখা গেলেও তার বোন শুভ্রা খুন হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায়। দামিনীর মুখ দিয়ে শুভ্রা খুনের কাল্পনিক কেলেঙ্কারি চাউর হতেই ধীরেন নিজেকে দোষী ভেবে ধীরে ধীরে মর্মাহত হতে থাকে এবং লোকসমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে থাকে—কেমন যেন অপ্রকৃতিস্থ
হয়ে পড়ে। এরূপ মনোবিকারগ্রস্থ অবস্থায় ডোবার ধারে বাঁশঝাড়টার ছায়ায় মানুষের মতো একটা কিছু নড়াচড়া করতে দেখে ধীরেন আর্তনাদ করে ওঠে।

আর্তনাদের মধ্যে  ধীরেনের মানসিকতা : এই আর্তনাদকারী অর্থাৎ ধীরেনকে গল্পের প্রথমদিকে যেভাবে দেখতে পাওয়া গেছে পরবর্তীতে কোনোভাবেই মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। ধীরেন ফিজিক্স অনার্স পড়া, স্কুলে ভূগোলের শিক্ষক, বই পড়ে সাধারণ রোগের বিনামূল্যে চিকিৎসা করত, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়তে সমিতি, লাইব্রেরি গঠনের মতো কাজ সে করে। কিন্তু কাহিনি এগিয়ে যাবার পথে লক্ষণীয় ছিল ধীরেনের কুসংস্কারাচ্ছন্নতা মোড়কে আবদ্ধ হতে থাকা। বোনের খুন হওয়ার পর গুণিনের গুণপনার গুণে যখন সেটা প্রকাশিত হয় যে, বলাই চক্রবর্তীর মতো লোকের হাতে তার বোনকে খুন হতে হয়েছে, তখনই তার মধ্যে একটা কাল্পনিক কেলেঙ্কারির অসম্মানবোধ জাগ্রত হয়ে উঠেছে এবং সেটা সে প্রায় মেনেও নিয়েছে। সে নিজেকে এতটা ছোটো ভাবতে শুরু করেছে যে, পরিচিত স্কুলের পরিবেশে সে নিজেকে আড়াল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্কুলের সেক্রেটারি যখন তাকে ছুটিতে যেতে বলে তখন সে সামান্য প্রতিবাদটুকুও করতে পারে না। বিজ্ঞানমনস্ক ধীরেন সন্ধ্যার অন্ধকারে বোনের আত্মার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ডোবার দিকে পা বাড়িয়ে অশরীরী আত্মার কবলে পড়ে। কাহিনির ঘটনাক্রম অনুসারে লক্ষ করা যায়—ধীরেন প্রতিবাদহীন দুর্বল চিত্তের একজন মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি।

প্রশ্ন:-“তবে কথাটাকে সে ঘুরিয়ে দিল একটু অন্যভাবে, যার ফলে অবিশ্বাসীর মনে পর্যন্ত খটকা বাধা সম্ভব হয়ে উঠল ।"-কোন কথার কথা বলা হয়েছে। কথাটি কে, কীভাবে ঘুরিয়ে দিয়েছিল তা লেখো।

উত্তর : 'উদ্ধৃতাংশটি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'হলুদ পোড়া' গল্পের আলোচিত হয়েছে। তিন দিন আগে পরে গাঁয়ে বলাই চক্রবর্তী ও শুভ্রার খুনের একুশ দিনের মাথায় বলাই চক্রবর্তীর ভাইপো নবীনের স্ত্রী দামিনীর ওপর অশরীরী আত্মা ভর করে। অশরীরী আত্মাকে ছাড়াতে কুঞ্জ গুণীনকে ডেকে পাঠানোর আগেই সে লোকমুখে সে-কথা শুনে সেখানে হাজির হয়। কুঞ্জ হাজির হয়েই “ভর সাঝে ভর করেছেন, সহজে ছাড়বে না” বলে সকলের মনে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরপর কুঞ্জ তার গুণপনা শুরু করে। দুর্বোধ্য সব মন্ত্র উচ্চারণ করে, দামিনীর এলোচুল খুঁটির সাথে শক্ত করে বেঁধে, মালসায় আগুন ধরিয়ে, হলুদ পুড়িয়ে নাকে শুঁকিয়ে এভাবে তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন চলে এবং সাথে সাথে প্রশ্নও চলে সে কে? যখন উত্তর আসে—শুভ্রা। তখনই তার খুনি কে জানতে চাইলে উত্তরে বলে,' বলাই চক্রবর্তী'। দামিনীর মুখে শুভ্রা বলাই চক্রবর্তীর নাম করায় কুঞ্জের ওপর বিশ্বাসীদের আস্থাতে খটকা লাগে। কারণ বলাই চক্রবর্তী যেহেতু শুভ্রার তিন দিন আগে খুন হয়েছিল। এখানে সে-কথাই বলা হয়েছে।
কথাটি অন্যভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া; গ্রামবাসীদের কুঞ্জের ওপর অনাস্থাতে আসরে নামে বুড়ো ঘোষাল। তার কথায় শুধু জ্যান্ত মানুষই গলাটিপে মারে না। শ্মশানে-মশানে আরও কতকিছুতেই তো ঘাড় মটকে মারে। এরপরেই কুঞ্জ সম্মান বাঁচাতে আসরে নামে। তার কথায় বলাই চক্রবর্তী শুভ্রাকে সরাসরি খুন করেনি; পরোক্ষভাবে কারোর ওপর তার রক্তমাংসের হাত দিয়ে খুন করেছে। ব্যাখ্যা হিসেবে কুঞ্জ বলে মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে শ্রাদ্ধ-শান্তি না-হলে আত্মা সরাসরি খুন করতে পারে। এক্ষেত্রে তা সম্ভব হয়নি বলে বলাই চক্রবর্তী পরোক্ষভাবে খুন করেছে—এ কথার দ্বারা উপস্থিত মানুষের
বিশ্বাসের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ পড়েছিল।