পথের পাঁচালী || অষ্টম শ্রেণী বাংলা| তিনটি পরীক্ষার সকল পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর
অষ্টম শ্রেণি বাংলা
প্রথম পরীক্ষার প্রশ্ন
প্রশ্ন:- . 'ছোটোদের পথের পাঁচালী'র কয়েকটি চরিত্রের নাম লেখো।
উত্তর:- ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী'র কয়েকটি চরিত্র হল—অপু, দুর্গা, হরিহর, সর্বজয়া।
প্রশ্ন:- অপু বাবার সাথে সরস্বতী পূজার বিকেলে কোন্ পাখি দেখতে গিয়েছিল ?
উত্তর- সরস্বতী পূজার বিকেলে অপু বাবা ও কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে। ‘নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- মহাভারতের কোন্ চরিত্রটি অপুর সবচেয়ে ভালো লাগত এবং কেন ?
উত্তর- মহাভারতের মহাবীর কর্ণ চরিত্রটিকে অপুর সবচেয়ে ভালো লাগত। বীর হয়েও চিরদিন সকলের কৃপার পাত্র বলেই কর্ণকে বালক অপুর সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত।
প্রশ্ন:-গুরুমশাইয়ের পাঠশালার অবস্থান কোথায় ছিল?
উত্তর- গুরুমশাইয়ের মুদিখানা দোকানের পাশেই ছিল তাঁর পাঠশালা।
প্রশ্ন:- অপুর মুখে নুনের গুঁড়ো কেন লেগেছিল?
উত্তর-অপু নুন ও লঙ্কা মিশিয়ে কাঁচা আম খাচ্ছিল, তাই তার মুখে নুনের গুঁড়ো লেগেছিল।
প্রশ্ন:-অপুর বাবা-মায়ের নাম কী ছিল ?
উত্তর- অপুর বাবার নাম হরিহর ও মায়ের নাম সর্বজয়া।
প্রশ্ন:- বালক অপু কোথায় খরগোশের ছবি দেখেছিল ?
উত্তর- বালক অপু বর্ণপরিচয়ে খরগোশের ছবি দেখেছিল।
প্রশ্ন:- দুপুরে খাওয়ার পর অপু কী করত?
উত্তর- দুপুরে খাওয়ার পর অপু হাতের লেখা ক-খ লিখতে লিখতে মন দিয়ে মায়ের মুখে মহাভারতের গল্প শুনত।
প্রশ্ন:- অপুর পাঠশালার গুরুমশাইয়ের নাম কী ছিল?
উত্তর। অপুর পাঠশালার গুরুমশাইয়ের নাম ছিল প্রসন্ন গুরুমশাই।
প্রশ্ন:- মহাভারতে অপুর সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ছিল
অর্জুন/কৃয়/কর্ণ।
উত্তর- মহাভারতে অপুর সবচেয়ে প্রিয় চরিত্র ছিল কর্ণ।
প্রশ্ন:- অপু কার পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল ?
উত্তর- অপু প্রসন্ন গুরুমহাশয়ের পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:-পাঠশালায় পৌঁছে দিয়ে হরিহর অপুকে কী বলেছিল ?
উত্তর- হরিহর অপুকে বলেছিল ছুটি হওয়ার সময় সে এসে অপুকে বাড়ি নিয়ে যাবে। অপু যেন বসে বসে লেখে, গুরুমশাইয়ের কথা শোনে,
কোনো দুষ্টুমি না করে।
প্রশ্ন:- “চোখের জল বাগ মানিত না।” –কার চোখের জল কখন বাগ মানত না ?
উত্তর- অপু যখন মায়ের মুখে মহাভারত শুনত তখন তার চোখের জল বাগমানত না।
প্রশ্ন:-“হাসচো কেন খোকা এটা কী নাট্যশালা!” কার উক্তি ?
উত্তর-আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন প্রসন্ন গুরুমহাশয় ।
প্রশ্ন:-কুড়িয়ে পাওয়া নারকেল সর্বজয়া দুর্গাকে দিয়ে কাদের বাড়ি পাঠিয়েছিল ?
উত্তর-কুড়িয়ে পাওয়া নারকেলটি সর্বজয়া দুর্গাকে দিয়ে সতুদের বাড়ি পাঠিয়েছিল।
প্রশ্ন:- নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের শ্মশানটি কোথায় অবস্থিত ?
উত্তর- নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের শ্মশানটি ছাতিমতলায় অবস্থিত।
প্রশ্ন:- গড়ের পুকুর কোথায় ?
উত্তর- গ্রামের আদি বাসিন্দা মজুমদারদের বাড়ির চারিদিকে গড়খাইয়ের যে অংশে জল থাকে সেটি গড়ের পুকুর নামে পরিচিত।
প্রশ্ন:- দুর্গা কোথায় কামরাঙা পাড়তে যাওয়ার কথা বলেছিল ?
উত্তর- দুর্গা পালিতদের বাগানে কামরাঙা পাড়তে যাবার কথা বলেছিল।
প্রশ্ন:- নিশ্চিন্দিপুরের কয়েকজন লোক কবে গ্রামের বাইরের মাঠে নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে গেছিল ?
উত্তর- নিশ্চিন্দিপুরের কয়েকজন লোক মাঘ মাসের শেষে সরস্বতীপূজার বিকেলে গ্রামের বাইরের মাঠে নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে গেছিল।
প্রশ্ন:-বাড়ির উঠোনে দুর্গা কী ব্রত করেছিল?
উত্তর- বাড়ির উঠোনে দুর্গা পুণ্যিপুকুর ব্রত করেছিল।
প্রশ্ন:- অপু যখন পাঠশালায় পৌঁছেছিল তখন গুরুমশায় কী করছিলেন ?
উত্তর- অপু যখন পাঠশালায় পৌঁছেছিল তখন গুরুমশায় তাঁর দোকানের মাচায় বসে দাঁড়িপাল্লায় সৈন্ধব লবণ ওজন করে কাউকে দিচ্ছিলেন।
প্রশ্ন:- হরিহর কার সঙ্গে মৎস্য-শিকারের পরামর্শ করছিলেন?
উত্তর-. হরিহর নবীন পালিতের সঙ্গে মৎস্য শিকারের পরামর্শ করছিলেন।
প্রশ্ন:-সেজোবউ কোন্ পুজোর জন্য চিনিবাসের থেকে মুড়কি, সন্দেশ কিনেছিলেন?
উত্তর- সেজোবউ দশহরা পুজোর জন্য চিনিবাসের থেকে মুড়কি, সন্দেশ কিনেছিলেন।
প্রশ্ন:-“অপুদের বাড়ি হইতে কিছু দূরে খুব বড়ো অশ্বত্থ গাছ ছিল”—গাছটির দিকে তাকিয়ে অপু কী ভাবত ?
উত্তর-গাছটির দিকে তাকিয়ে অপু অনেক দূরের কোনো দেশের কথা ভারত।
প্রশ্ন:- কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বৃষ্টি থামানোর জন্য দুর্গা যে ছড়াটি বলেছিল সেটি লেখো।
উত্তর-কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বৃষ্টি থামানোর জন্য দুর্গা ‘নেবুর পাতায়করচা, হে বিষ্টি ধরে যা’—ছড়াটি বলেছিল।
প্রশ্ন:- মায়ের কাছ থেকে অপু কার লেখা মহাভারত শুনত ?
উত্তর- মায়ের কাছ থেকে অপু কাশীরাম দাসের লেখা মহাভারত শুনত।
প্রশ্ন:- যুদ্ধ জিনিসটি উপভোগ করার জন্য অপু কী করত?
উত্তর- যুদ্ধ জিনিসটি উপভোগ করার জন্য একটা বাখারি বা হালকা গাছেরডালকে অস্ত্রের মত বানিয়ে অপু বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানে ঘুরে
বেড়াত ও আপনমনে কথা বলত।
প্রশ্ন:- অপুদের বাড়ির পাশে কার ভিটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল ?
উত্তর- অপুদের বাড়ির পাশে নীলমণি রায়ের ভিটা জঙ্গলে পরিণত হয়েছিল।
প্রশ্ন:- নবীন পালিত মাঠে বেড়াতে বেড়াতে কী গল্প করেছিলেন ?
উত্তর-> মাঠে বেড়াতে বেড়াতে নবীন পালিত হরিহরের সঙ্গে একবার মাঠের উত্তর অংশের জমিতে শাঁকআলু চাষ করে কেমন লাভবান
হয়েছিলেন, সেই গল্প করেছিলেন।
প্রশ্ন:- অপুর বইয়ের দফতরে বিদ্যাসাগর প্রণীত কোন্ বইটি ছিল ?
উত্তর-অপুর বইয়ের দফতরে বিদ্যাসাগর প্রণীত বর্ণপরিচয় তৃতীয় ভাগ বইটি ছিল।
প্রশ্ন:- “মহাবীর, কিন্তু চিরদিনের কৃপার পাত্রয চিরদিনের কৃপার পাত্র মনে করেছে কেন?
কর্ণ।”—অপু কর্ণকে এক অসহায় পরিস্থিতিতে পড়ে মহাবীর কর্ণের মৃত্যু হয়েছিল বলে অপুর মনে হয়েছে কর্ণ চিরদিনের কৃপার পাত্র।
প্রশ্ন:-“ওমা! এ আবার কে রে?কে চিনতে পারছি নে?” সর্বজয়া অপুকে দেখে এ কথা বলেছেন কেন ?
উত্তর - দুর্গা ওড়কলমি ফুলের সাদা কুঁড়ি দিয়ে অপুকে নাকে নোলক পরিয়ে দিয়েছিল বলে সর্বজয়া মজা করে এ কথা বলেছিল।
প্রশ্ন:- “বাবার কাছ থেকে দেখিস রথের সময় চারটে পয়সা নেব।” -দুর্গা অপুকে সঙ্গে নিয়ে এমন পরিকল্পনা করেছে কেন?
উত্তর-চিনিবাস ফেরিওলার কাছ থেকে লোভনীয় মিষ্টি কেনার মতো টাকা অপু-দুর্গার ছিল না। তাই দুর্গা আসন্ন মেলায় মুড়কি কিনে খাওয়ায়
বলে অপুকে আনন্দ দিতে এমন পরিকল্পনা করেছে।
প্রশ্ন:- “দুর্গার ... বাধা পাইয়া তাহার কথা অর্ধপথেই বন্ধ হইয়া গেল।”-কার, কোন্ কথা বন্ধ হয়ে গেলে ?
উত্তর- অপু দুর্গার সঙ্গে মিলে গোপনে কাঁচা আম খেয়ে দাঁত টকে যাওয়ার কথা মায়ের কাছে বলে ফেলার উপক্রম করে। তখন দুর্গার কাছে বাধা পেয়ে তার কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপুর টিনের বাক্সে কী কী সম্পত্তি ছিল ?
উত্তর- অপুর ডালাভাঙা টিনের বাক্সে ছিল একটা রং-ওঠা কাঠের ঘোড়া, যার দাম চার পয়সা, একটা টোল খাওয়া টিনের ভেঁপু বাঁশি এবং
গোটাকতক কড়ি। এ ছাড়া একটি দু-পয়সা দামের পিস্তল, কতকগুলো শুকনো নাটা ফল, কিছু খাপরার কুচি।
প্রশ্ন:- নীলুর সঙ্গে অপু কোথায় যেতে রাজি হয়েছিল ?
উত্তর- নীলুর সঙ্গে অপু দক্ষিণ মাঠে পাখির ছানা দেখতে যেতে রাজি হয়েছিল।
প্রশ্ন:- নিশ্চিন্দিপুরের লোক কখন নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে যাচ্ছিল?
উত্তর- সরস্বতী পুজোর বিকেলে হরিহর ও অপু-সহ নিশ্চিন্দিপুরের কয়েকজন লোক নীলকণ্ঠ পাখি দেখতে বেরিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “অপমানে দুঃখে সর্বজয়ার চোখে জল আসিল”—কখন, কেন সর্বজয়ার এরূপ অবস্থা হয়েছিল ?
উত্তর-বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসের চতুর্থ অধ্যায়ে ভুবন মুখুজ্যের বাড়ির সেজ ঠাকরুন তাঁর মেয়ে টুনু ও দেওরের ছেলে সতুকে সঙ্গে নিয়ে সর্বজয়ার বাড়িতে আচমকা হামলা করেন। দুর্গার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ এনে তিনি তার পুতুলের বাক্স টেনে বের করে চুরির সামগ্রী খুঁজে বের করেন। একটি পুঁতির মালা এবং কয়েকটি আমের গুটি চুরির অভিযোগে তিনি সর্বজয়া ও দুর্গাকে বহু অকথা কুকথা বলেন। গরিব হলেও ভদ্র পরিবারের বধূ সর্বজয়ার এতে অসম্ভব অপমানবোধ হয় এবং এজন্যই তার চোখে জল এসে যায়।
প্রশ্ন:- গড়ের পুকুরের জঙ্গলে অপু কী কুড়িয়ে পেয়েছিল? সেটি আসলে কী তা কীভাবে জানা গেল ?
উত্তর- ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে অপু দিদি দুর্গার সঙ্গে গড়ের পুকুরের জঙ্গলে গিয়ে পাকা শেওড়ার ফল খাচ্ছিল। ওই সময় সে শেওড়াগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে একটি গোল মতো একদিকে ছুঁচলো পল কাটা পাথরের মত চকচকে জিনিস খুঁজে পায়। বস্তুটির প্রকৃত পরিচয়: অপু, দুর্গা এবং তাদের মা সর্বজয়া তাদের সীমিত জ্ঞানে জিনিসটিকে হিরে বলে মনে করেছিল। সর্বজয়া তার স্বামী হরিহরকে দেখিয়ে নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। কিন্তু হরিহরও বুঝতে না পারায় তার মনে আশা জাগে যে, জিনিসটা হয়তো হিরেই। তারপর হরিহর গ্রামের গাঙ্গুলিবাড়িতে তাদের কলকাতা থেকে আগত জামাই সত্যবাবুকে দেখিয়ে নিশ্চিত হয়েছিল যে, ওটি হিরে নয়, ঝাড়লণ্ঠনে ঝুলোনোর বেলোয়ারি কাচ।
প্রশ্ন:- আতুরি ডাইনি সম্পর্কে অপুর ধারণা কী ছিল?
উত্তর-বয়সের ভারে ন্যুব্জ এক বৃদ্ধা ছিলেন আতুরি, যাকে অপু-সহ গ্রামের সকলেই আতুরি ডাইনি বলে জানত। শিশুদের ভয় দেখানোর জন্য
তার সম্পর্কে নানা বিভীষিকাময় কাহিনি প্রচলিত ছিল। স্বাভাবিকভাবেই অপুও এই কথাগুলি বিশ্বাস করেছিল। সে জানত, আতুরি ডাইনির বাড়ির উঠোনের গাছ থেকে বিলাতি আমড়া পাড়ার অপরাধে জেলেপাড়ার এক ছেলের প্রাণ ডাইনি কচু পাতায় বেঁধে জলে ডুবিয়ে রেখেছিল। পরে মাছ সেটা খেয়ে ফেলতেই ছেলেটি মারা যায়। এ ছাড়াও অপুর ধারণা ছিল, আতুরি ডাইনি ইচ্ছে করলে কেবল দৃষ্টির সাহায্যেই ছোটো ছেলেদের রক্ত চুষে খেয়ে নিতে পারে। সেই ছেলে জানতেও পারবে না কিন্তু ঘুম তার আর ভাঙবে না।
প্রশ্ন:- “ওদের তুমি মঙ্গল করো। তুমি ওদের মুখের দিকে চেয়ো।” –কে, কেন এই প্রার্থনা করেছেন ?
উত্তর- 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে অপু-দুর্গার মা সর্বজয়াকে তার সন্তানদের জন্য ঠাকুরের কাছে এই প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।
একদিন প্রবল কালবৈশাখী ঝড় ও তুমুল বৃষ্টির পর বাড়ি ফেরার পথে দুর্গা একটা ঝুনো নারকেল এবং অপু নারকেলের বাগলো পেয়ে তা নিয়ে বাড়ি ফেরে। ভুবন মুখুজ্যের বাড়ির বাগানে বেড়ার ধারের নারকেল গাছ থেকে ঝড়ের সময় পড়ে গিয়েছিল সেগুলো। নারকেল ও বাগলো পেয়ে আনন্দের মুহূর্ত অবশ্য বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মুখুজ্যেবাড়ির সেজঠাকরুণের শাপশাপান্ত কানে আসতেই সন্তানদের অমঙ্গলের আশঙ্কায় সর্বজয়া নারকেল ফেরত পাঠায় দুর্গাকে দিয়ে। তারপরে তুলসীতলায় প্রদীপ দিতে দিতে ঈশ্বরের কাছে সন্তানদের মঙ্গল কামনা করে সর্বজয়া।
প্রশ্ন:- আমের গুটি যে চুরির জিনিস নয় তা অপুর কেন মনে হয়েছিল ?
উত্তর- ভুবন মুখুজ্যের বাড়ির সেজোঠাকরুন যখন তাদের বাড়িতে এসে পুতুলের পুঁতির মালা ও আমের গুটি চুরির অপবাদ দুর্গার ওপরে
চাপিয়ে দেন, তখন অপুর মনে হয়েছিল আমের গুটি চুরির জিনিস নয়। কারণ, আগের দিন বিকেলে দুর্গা তাকে সঙ্গে করে টুনুদের বাগানে আম কুড়াতে গিয়েছিল এবং মুখুজ্যেদের সোনামুখী আমগাছতলায় যে আমগুলো পড়েছিল, তা দুর্গা কুড়িয়ে এনেছিল জারিয়ে খাবে বলে। কিন্তু সর্বজয়ার উপস্থিতির কারণে তা সম্ভব
হয়নি। কাজেই আমচুরির অপবাদ যে সর্বৈব মিথ্যা, তা অপু খুব ভালো করেই জানত ।
প্রশ্ন:- “অপুর মুখ শুকাইয়া গেল ... আঙুরি ডাইনির বাড়ি।”-আতুরি ডাইনির নাম শুনে অপুর মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে অপু ও তার বন্ধু নীলু দক্ষিণ মাঠে পাখির ছানা দেখে ফেরার পথে পথ হারিয়ে আতুরি ডাইনির বাড়ির সামনে চলে আসে। প্রথমটায় বুঝতে না পারলেও পরে যখন তারা বিপদ হৃদয়ঙ্গম করে তখন অপুর মুখ ভয়ে শুকিয়ে গিয়েছিল। কারণ, গ্রামে আতুরি ডাইনিকে নিয়ে নানা ছেলেভুলানো গল্প প্রচলিত ছিল। কোনো-এক সময়ে নাকি একটি ছোটো ছেলে আতুরির উঠোনের গাছ থেকে বিলাতি আমড়া পেড়েছিল। সেই অপরাধে ডাইনি তার প্রাণ কেড়ে কচুর পাতায় মুড়ে জলে ডুবিয়ে রাখে। পরে মাছে সেটা খেয়ে ফেললে ছেলেটি মারা যায়। ডাইনি সম্পর্কে আরও প্রচলিত ছিল যে, কেবল দৃষ্টির মাধ্যমে সে শিশুদের রক্তশোষণ করে নিতে পারে। যার রক্ত ডাইনি শোষণ করে, সে কিছুই বুঝতে পারে না। পরে বাড়ি ফিরে ঘুমালে আর ঘুম থেকে ওঠে না। আতুরি ডাইনির বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপুর এইসব ভয়ংকর গল্প মনে পড়ে গিয়েছিল। তাই তার মুখ ভয়ে শুকিয়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “দুপুরের কিছু পরে হরিহর কাজ সারিয়া বাড়ি ফিরিল।” হরিহর কার বাড়িতে, কীসের কাজ করেন? তাঁর ছেলে ও মেয়ের নাম কী? হরিহর কোন্ গ্রামে বাস করতেন ?
উত্তর- হরিহরের জীবিকা: বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, হরিহর গ্রামের অন্নদা
রায়ের বাড়িতে গোমস্তার কাজ করত।
> হরিহরের ছেলেমেয়ে: হরিহরের ছেলের নাম অপু এবং মেয়ের নাম দুর্গা।
> হরিহরের গ্রাম: হরিহর নিশ্চিন্দিপুর নামক গ্রামে বাস করতেন।
প্রশ্ন:- নারকেলের মালাটা আমায় দে।” বক্তা কে? সে কাকে এই কথা বলেছিল? নারকেলের মালা দিয়ে বক্তা কী করবে? শেষপর্যন্ত নারকেলের মালার কী পরিণতি হয়েছিল ?
উত্তর, বক্কা: উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হল অপু।
→ বছার উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: অপু তার দিদি দুর্গাকে এই কথা বলেছিল।
→ নারকেলের মালার প্রয়োজনীতা। অপুর দিদি দুর্গা পট্লিদের বাগান থেকে কচি আম কুড়িয়ে এনে জারিয়ে খাওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সেজন্য নুন আর তেল প্রয়োজন ছিল। দুর্গা মায়ের অনুপস্থিতির সুযোগে গোপনে অপুকে রান্নাঘর থেকে তেল ও নুন আনতে বলে। অপু তখন তেল আনবে বলে দিদির কাছে নারকেলের মালাটা চায়।
নারকেলের মালার পরিণতি : আম জারিয়ে পাওয়ার মাঝখানেই অপু- দুর্গার মা সর্বজয়া চলে এলে দুর্গা এই গোপন কর্মের প্রমাণ লোপাটের জন্য খালি মালাটা এক টানে ভেরেণ্ডা-কচার বেড়া পার করে নীলমণি রায়ের পরিত্যক্ত জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়েছিল।
দ্বিতীয় পরীক্ষা পথের পাঁচালী অষ্টম শ্রেণী
প্রশ্ন:- অপু কার সঙ্গে প্রথম গ্রামের বাইরে পা দিয়েছিল ?
উত্তর-অপু তার বাবা হরিহরের সঙ্গে প্রথম গ্রামের বাইরে পা দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর কোন্ শিষ্যর বাড়ি গিয়েছিলেন?
উত্তর-হরিহর তাঁর শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- সর্বজয়ার বলা অপুর 'উদমুষ্টি কাণ্ড' কী ছিল?
উত্তর - বনবাদাড়ের পুলস্থূলতা নিয়ে এসে বাড়ির মাঝখানে চলার পথে অপুর ‘টেলিগিরাপের' তার টাঙানো ছিল সর্বজয়ার কাছে 'উদঘুটি কান্ড'।
প্রশ্ন:- অপু কার কাছ থেকে শকুনের ডিম সপ্তাহ করে এনেছিল ?
→ অপু হিরু নাপিতের কাঠালতলায় গোরু বাঁধে যে রাখালরা তাদের একজনের কাছ থেকে চার পয়সা ও কয়েকটি কড়ির বিনিময়ে শকুনের ডিম সংগ্রহ করে এনেছিল।
প্রশ্ন:- কে কেন অপুর পায়ের আঙুলে পাথরকুচি পাতা বেটে বেঁধে দিয়েছিল ?
উত্তর- চেরা বাঁশে অপুর পা কেটে গিয়েছিল বলে অমলা অপুর পায়ে পাথরকুচি পাতা বেটে বেঁধে দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “তুমি বড়ো ভালো ছেলে”—কথাটি কে বলেছিল ?
উত্তর- অপুর কল্পিত রাঙা শাড়ি পরা, দেবী দুর্গার মতো হার ও বালা পরা বিশালাক্ষী দেবী এই কথাটি বলেছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গা ছোটো হাঁড়িতে কী রান্না করেছিল?
উত্তর- > দুর্গা ছোটো হাঁড়িতে ভাত ও মেটে আলু রান্না করেছিল।
প্রশ্ন:- 'সব দর্শন সংগ্রহ' বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কী লেখা ছিল?
উত্তর→ ‘সর্ব-দর্শন সংগ্রহ' বইটিতে লেখা ছিল যে পারদ শকুনের ডিমে পারদ ভরে দু-দিন রোদে দেওয়ার পর তা মুখের মধ্যে রাখলে মানুষ
উড়তে পারে।
প্রশ্ন:- “আমি এ গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী।” তিনি কী আদেশ করেছিলেন?
উত্তর→ বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্তীকে আদেশ করেছিলেন চতুর্দশীর রাতে পঞ্চাননতলায় একশ আটটা কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করতে।
প্রশ্ন:- দুর্গা কেন অপুকে দুটি পয়সা দিয়েছিল?
উত্তর→ যাত্রা দেখতে গিয়ে মুড়কি কেনা বা 'নিচু' (লিচু) খাওয়ার জন্যে দুর্গা অপুকে দুটি পয়সা দিয়েছিল।
প্রশ্ন:- নারকেল মালায় দুর্গা কী নিয়েছিল।
উত্তর→ দুর্গা নারকেল মালায় দু-পলা তেল নিয়েছিল।
প্রশ্ন:- মারের হাত থেকে দূর্গাকে কে বাঁচিয়েছিলেন?
উত্তর→ মারের হাত থেকে দুর্গাকে টুনির মা বাঁচিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গা চড়ুইভাতির সময় কোথা থেকে মেটে আলুর ফল এনেছিল ?
উত্তর- দুর্গা পুঁটিদের তালতলায় একটা ঝোপের মাথায় ফলে থাকা মেটে আলুর ফল এনেছিল ।
প্রশ্ন:- সতু অপুর চোখে কী ছুঁড়ে মেরেছিল?
উত্তর-সতু মাকাল ফল নিয়ে পালানোর সময় অপু তাকে তাড়া করলে সে অপুর চোখে বালি ছুঁড়ে মেরেছিল।
প্রশ্ন:- নীলপূজার দিন বিকালে সন্ন্যাসীরা কী করে ?
উত্তর -নীলপূজার দিন বিকালে সন্ন্যাসীরা একটা ছোটো খেজুর গাছে কাঁটা ভাঙে।
প্রশ্ন:- “সে নগদ পয়সা ছাড়া কোনো রকমেই রাজি হয় না।” –এখানে 'সে' বলতে কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- "সে" বলতে হিরু নাপিতের কাঁঠালতলায় গোরু বেঁধে গৃহস্থের বাড়িতে তেল-তামাক আনতে যেত যে রাখালেরা, তাদের মধ্যে একজনের কথা বলা হয়েছে।
প্রশ্ন:- শূন্য মার্গে বিচরণ করার পদ্ধতি অপু কোথায় পড়েছিল ?
উত্তর→ শূন্য মার্গে বিচরণ করার পদ্ধতি অপু তার পিতার 'সর্ব-দর্শন সংগ্রহ' নামক একটি বইতে পড়েছিল।
প্রশ্ন:- বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়িতে অপু কোন্ বইটি দেখতে চাইত ?
উত্তর- বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজির বাড়িতে অপু 'প্রেমভক্তি চন্দ্রিকা' বইটি দেখতে চাইত।
প্রশ্ন:- কারা চড়ুইভাতি করেছিল, নামগুলি লেখো।
উত্তর→ দুর্গা, অপু ও কালীনাথ চক্কত্তির মেয়ে বিনি—এরা তিনজনে মিলে চড়ুইভাতি করেছিল।
প্রশ্ন:- “তাহাদের বাড়িতে এরকম জিনিস নাই।”—কোন্ জিনিস দেখে অপুর এ কথা মনে হয়েছিল ?
উত্তর- হরিহরের শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়ির কড়ির আলনা, রংবেরঙের ঝুলন্ত শিকা, পশমের পাখি, কাচ ও মাটির পুতুল, শোলার গাছ দেখে অপুর এ কথা মনে হয়েছিল।
প্রশ্ন - “একদিন পাড়ার এক ব্রাক্ষ্মণ প্রতিবেশীর বাড়ি অপুর নিমন্ত্রণ হইল।”—সেই নিমন্ত্রণ বাড়িতে যাওয়ার জন্য অপুকে কে ডাকতে এসেছিল?
উত্তর- হরিহরের শিষ্য লক্ষ্মণের এক ব্রাক্ষ্মণ প্রতিবেশীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যাওয়ার জন্য সেই বাড়িরই একটি মেয়ে, যার নাম অমলা,
এসে অপুকে ডেকেছিল।
প্রশ্ন:- “বাড়ি আসিয়া অপু দিন পনেরো ধরিয়া নিজের অদ্ভুত ভ্রমণ কাহিনি বলিয়া বেড়াইতে লাগিল।”—তার ভ্রমণ কাহিনী 'অদ্ভুত' কেন?
উত্তর - অপু তার বাবা হরিহরের সঙ্গে প্রথমবার গ্রামের বাইরে লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে গিয়ে যেসব নতুন নতুন জিনিস দেখেছিল ও উচ্চমানের খাদ্য খেতে পেয়েছিল, তা সে নিজের এই ছোট্ট জীবনে কখনও দেখেনি, তাই এই ভ্রমণ তার কাছে ‘অদ্ভুত’ ছিল।
প্রশ্ন:- বিশালাক্ষী দেবী কোন বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবতা? তিনি স্বপ্নে মন্দির ত্যাগের কী কারণ বলেছিলেন?
উত্তর- উদ্দিষ্ট বংশ: অপুদের বাড়ির কাছাকাছি বনের মধ্যে মজা পুকুরের পাড়ে ছিল দেবী বিশালক্ষীর মন্দির। ইনি ছিলেন গ্রামের মজুমদার
বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবী।
> মন্দির ত্যাগের কারণ: একসময় কোনো এক বিষয়ে সফলতা পেয়ে মজুমদারেরা দেবীর মন্দিরে নরবলি দেন। এতে দেবী রেগে গিয়ে স্বপ্নে জানিয়েছিলেন যে, তিনি মন্দির ত্যাগ করে চলে যাবেন, আর কখনও ফিরবেন না। এইসব ঘটনা অনেককাল আগের।
প্রশ্ন:- “গ্রামে অল্প দিনে ওলাওঠার মড়ক আরম্ভ হবে'- এই মড়ক থামাতে সে কী ব্যবস্থা নিতে বলেছিল ?
উত্তর- বক্তা: নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ চক্রবর্তীর সামনে সুন্দরী মেয়ের রূপে উপস্থিত হয়ে গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী এ কথা 'বলেছিলেন।
→ গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা: ষোড়শী বালিকার রূপ ধরে বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্তীকে জানান যে চতুর্দশীর রাত্রে পঞ্চাননতলায় একশো আটটি কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করলেই একমাত্র ওলাওঠার মড়কের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
প্রশ্ন:-“পুরাদমে বেচাকেনা আরম্ভ হইয়া গেল।”—কোন দোকানে কী বেচাকেনার কথা বলা হয়েছে? প্রথমে কে পান কিনেছিল?
উত্তর- বেচাকেনার বস্তু: একদিন খেলার ছলে দুর্গা ও অপু ইট সাজিয়ে একটি দোকানঘর বানিয়েছিল। সেই দোকানঘর বনজঙ্গল থেকে
সংগৃহীত বিভিন্ন ফল, ফুল, লতা-পাতা দিয়ে সাজানোর পর, দোকানে পুরোদমে কেনাবেচা আরম্ভ হয়। দুর্গা দোকান থেকে পুতুলের বিয়ের
জন্য নকল সরু চাল কেনে। এইরকম নানাবিধ জিনিস কেনাবেচার মাধ্যমেই খেলা জমে ওঠে।
→ প্রথম ক্রেতা: দুর্গাই তাদের খেলার ছলে বানানো দোকানঘর থেকে প্রথম খরিদ্দার হিসেবে পান কেনে।
প্রশ্ন:- “তাহার বাবা বলিল—ওই দেখো খোকা রেলের রাস্তা।” কার বাবার কথা বলা হয়েছে? রেলের রাস্তা দেখে খোকা কী বলেছিল ?
> উল্লিখিত প্রশ্নে 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থের প্রধান চরিত্র অপুর বাবা হরিহরের কথা বলা হয়েছে।
খোকার প্রতিক্রিয়া: রেলের রাস্তা দেখে খোকা অর্থাৎ অপু খুবই বিস্মিত হয়েছিল ও মজা পেয়েছিল। বিস্ময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার মনে এক আনন্দ-মিশ্রিত অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছিল। তার কেবলই মনে হচ্ছিল যে, রেলের রাস্তা কেমন সহজভাবে তার সামনে এসে পড়েছে। রেলের রাস্তা দেখে তার মনে জাগে নানান প্রশ্ন। তার শিশুমনে রেলগাড়ি দেখার সাধও জাগে। কিন্তু রেলগাড়ি দু-ঘণ্টা পরে আসবে বলে, সেই যাত্রায় তার আর রেলগাড়ি দেখা হয়ে ওঠে না।
প্রশ্ন:- অপু তার বাবার শিষ্যের বাড়িতে বধূটির ঘরে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল কেন?
উত্তর -;আপু তার বাবার শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল। সেখানে তার ছোটোভাইয়ের বধূর ঘরে সে নিমন্ত্রণ খেতে যায়। খেতে বাসে খাবারের জিনিসপত্র ও আয়োজনের ঘটা দেখে অপু অবাক হয়ে যায়। একটা রেকাবিতে আলাদা করে নুন, লেবু দেওয়া ছিল। প্রতিটা তরকারির জন্য ছিল আলাদা আলাদা বাটি। এ ছাড়াও ছিল তার ও তার দিদির প্রিয় খাদ্য লুচি। শুধু তারই জন্য ছিল একটা বড়ো গলদাচিংড়ির মাথা। বাড়িতে অনেকদিন তাদের সকাল-বিকেল জলখাবার না খেয়ে কেটে যায়। ভালো খাবার এতদিন অপুর স্বপ্নেই ছিল কেবল। তাই খাবারের আয়োজন দেখে অপু খুবই অবাক হয়ে যায় ।
প্রশ্ন:- আজ যেন একটি উৎসবের দিন।”—কখন, কেন দুর্গার এরূপ মনে হয়েছিল ?
উত্তর- আলোচ্য অংশের কাহিনি থেকে জানা যায়, দুর্গাপুজোর আর মাত্র বাইশ দিন বাকি ছিল। দুর্গা মনে মনে হিসেব করে রেখেছিল যে, তার
বাবা বাড়ি ফিরবেন ওই কটা দিন পরেই। এ কথা ভেবেই তার মন আনন্দে ভরে উঠেছিল। তার মনে হয়েছিল, বাবা অপু, মা ও তার জন্য পুতুল, কাপড় ও আলতা, আনবেন। এ ছাড়াও সেদিন রাতে তাদের বাড়িতে রান্নার আয়োজন হয়েছিল। সাধারণত তাদের বাড়িতে রাতে রান্না হয় না। সকালের বাসি ভাত তরকারি দিয়েই তারা রাতের খাওয়া সেরে নেয়। তাই সেই রাত্রে রান্নার আয়োজন ও কয়েকদিন পর বাবার বাড়ি ফেরার আনন্দ মিলেমিশে দিনটি দুর্গার কাছে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল।
প্রশ্ন:- “দশ-বারো দিন সন্ন্যাসী-নাচনের পর চড়কের পূর্বরাত্রে নীলপূজা আসিল।”—সন্ন্যাসী নাচন কী? নীলপূজার দিন বিকেলে দুর্গা ও অপু কী করেছিল?
উত্তর-- সন্ন্যাসী নাচন: চড়কপূজার সময় সন্ন্যাসীর দল বাড়ি বাড়ি নাচগান করে। গৃহস্থ বাড়ি থেকে সন্ন্যাসীদের পুরোনো কাপড়, চাল পয়সা বা ঘড়া দেওয়া হয়। এই প্রথাকে সন্ন্যাসী-নাচন বলে।
দুর্গা ও অপুর কর্মকাণ্ড: নীলপূজার দিন বিকেলে দুর্গা ও অপু নদীর ধারে সন্ন্যাসীদের কাঁটাভাঙা দেখতে গিয়েছিল। সেখানে ভুবন মুখুজ্যেদের বাড়ির মেয়েদের সঙ্গে তাদের দেখা হয়েছিল। টুনু বলেছিল, সেদিন রাতে সন্ন্যাসীরা শ্মশান জাগাতে যাবে। দুর্গা সন্ন্যাসীদের মড়ার মুন্ডু নিয়ে আসার ছড়া শুনিয়েছিল। রানু বলেছিল যে, সেদিন রাতটা ভালো নয় তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে যাওয়াই
উচিত কাজ হবে। দুর্গা রানুদের সঙ্গে চলে গেলেও অপু গেল না। তারপর প্রচন্ড মেঘ করে এলে অপু ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরে আসছিল। পথে নেড়ার ঠাকুমার সঙ্গে তার দেখা হয়। অপুর মনে হয়, তার চারিদিকে কটু গন্ধে ভরে গিয়েছে। অবশেষে নেড়ার ঠাকুমা তাকে বাড়ির পথে এগিয়ে দিয়ে যায়।
প্রশ্ন:-“সন্ধ্যার পর সর্বজয়া ভাত চড়াইয়াছিল”—দ্বাদশ পরিচ্ছেদে অপুদের বাড়ির যে বর্ণনা আছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী'-র দ্বাদশ পরিচ্ছেদে রাতের বেলায় অপুদের বাড়ির ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সর্বজয়া ভাত রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। অপু দাওয়াতে মাদুর পেতে বসেছিল। চারিদিক অন্ধকার, ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল।
দুর্গা বঁটি পেতে তরকারি কাটছিল। তাদের বাবা বাড়িতে আসবে বলে অন্যান্য দিনের প্রথা ভেঙে সেদিন ঘরে রাতে টাটকা রান্না হচ্ছিল।
প্রশ্ন:-“এরা খুব বড়োলোক তো”–কার, কেন এমন মনে হয়েছিল ?
উত্তর- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি : প্রশ্নে উদ্ধৃত কথাটি অপুর মনে হয়েছিল।
মনে হওয়ার কারণ: পিতা হরিহরের সঙ্গে তাঁর শিষ্য লক্ষ্মণ মহাজনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে অপু তাদের ঘরের বহুবিধ সামগ্রী।দেখেছিল। এসব সামগ্রী যেমন কড়ির আলনা, রঙিন ঝুলন্ত শিকা, পশমের পাখি, কাচের পুতুল, মাটির পুতুল, শোলার গাছ ইত্যাদি দেখে অপুর মনে হয়েছিল যে, তারা বেশ বড়োলোক।
প্রশ্ন:- “আমি জানি ওদের ছড়া”–ছড়াটি উল্লেখ করো।
উত্তর- দুর্গা অপুকে নীলপূজায় গাজনের সন্ন্যাসীদের যে ছড়া শুনিয়েছিল, সেটি হল-“সগো থেকে এল রথ নামল খেতুতলে চব্বিশ কুটি বাণবর্ষা শিবের সঙ্গে চলে—
সত্যযুগের মড়া আওল যুগের মাটি
শিব শিব বল রে ভাই ঢাকে দ্যাও কাঠি — "
প্রশ্ন:- “বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস।”—সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার উপকারিতা সম্পর্কে লেখো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে অপুর ছেলেবেলা থেকে শুরু করে কৈশোরকাল পর্যন্ত ছবি তুলে ধরা হয়েছে। গ্রাম্য গরিব পরিবারের সন্তান অপুর ছোটবেলা কেটেছে সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলা করে। যে-কোনো শিশুর কাছেই দামি ও সহজে পাওয়া যায় না, এমন জিনিসের চেয়ে সামান্য ও সহজে মেলে জিনিস নিয়ে খেলার উপকারিতা বেশি। এতে জীবনে প্রাপ্তির মূল্য বুঝতে শেখে সে। অপব্যয় ও অপচয় সম্পর্কে তার ধারণা জন্মায়। এতে তার কল্পানাশক্তি বৃদ্ধি পায়, অল্পে খুশি হয়ে জীবনকে আনন্দময় করে তুলতে শেখে সে।
প্রশ্ন:-“সে শুষ্ক মুখে উদাস নয়নে ও পাড়ার পথে রায়েদের বাগানে পড়ন্ত আমগাছের গুঁড়ির উপর বসিয়াছিল।”—'সে' কে? সে কেন এভাবে বসেছিল—তা তোমার পাঠ্য রচনা অবলম্বনে লেখো।
উত্তর- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: উদ্ধৃত অংশে 'সে' বলতে অপুর কথা বলা হয়েছে।
> উদ্দিষ্ট ব্যক্তির বসে থাকার কারণ: অপু তার বাবার শিষ্যবাড়ি যাওয়ার সময় রেলরাস্তা, টেলিগ্রাফের তার ইত্যাদি দেখেছিল শিশুমনের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সে নিজের বাড়ির উঠোনে অনেক পরিশ্রম করে নকল টেলিগ্রাফের তার টাঙিয়েছিল। কিন্তু সেই তার দেখতে না পেয়ে সর্বজয়া তা ছিঁড়ে ফেলে। তাতে অপুর মায়ের ওপর গভীর অভিমান হয়। সে মাকে সেই তার টাঙানোর পরিশ্রমের ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেও যখন বিফল হয়, তখন রায়েদের বাগানে আমগাছের গুঁড়ির ওপর গিয়ে শুকনো মুখে, উদাস চোখে বসে থাকে।
প্রশ্ন:- “দূর, তুই একটা পাগল।”-কে, কাকে একথা বলেছে? বক্তা কেন তাকে পাগল বলেছে?
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে দুর্গা তার ভাই অপুকে পাগল বলেছে।
'পাগল' বলার কারণ: অপু জন্মানোর পর থেকে কখনও দূরে কোথাও যায়নি। নদীর ওপারের খড়ের মাঠে বাবলা গাছে ফুটে থাকা হলুদ ফুল, গোরু চরার দৃশ্য, মোটা গুলগুলতা দুলানো শিমুল গাছটাও তার কাছে ছিল অনেক দূর। রাখালরা নদীর ধারে গোরুকে জল খাওয়ানো, ছোটো জেলে ডিঙি বেয়ে অঙ্কুর মাঝির মাছ ধরার দোয়াড়ি পাততে যাওয়া, সোঁদালি ফুলের হাওয়ায় দুলতে থাকা- এসব সে দেখত, কিন্তু শব্দের অভাবে প্রকাশ করতে পারত না। শুধু তার দিদিকে সে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলত “ওই যে? ওই গাছটার পিছনে? কেমন অনেক দূর না?” এতে দুর্গা হাসতে হাসতে তাকে 'পাগল' বলে সম্বোধন করত।
প্রশ্ন:- “বড়ো সুন্দর বনভোজনের স্থানটি ”বনভোজনে কারা কারা উপস্থিত ছিল? বনভোজনের স্থানটির বিবরণ দাও। সেই বনভোজনে যাওয়ার উপকরণ কী ছিল ?
উত্তর:- উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ: বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় রচিত ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে বনভোজনে উপস্থিত ছিল অপু, দুর্গা ও কালীনাথ চক্রবর্তীর মেয়ে বিনি।
স্থানের বিবরণ: নীলমণি রায়ের ভিটার কিছুটা অংশ পরিষ্কার করে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছিল। বনভোজনের স্থানটি ছিল খুব সুন্দর। চারদিকে বনঝোপ, তেলাকুচো লতা দুলছিল, বেলগাছের নীচে ছিল শেওড়াগাছের ফুলের ঝাড়। আধপোড়া কয়েকটা দুর্বাঘাসের উপর খঞ্জনী পাখিরা নাচছিল। প্রথম বসন্তের দিনে ঝোপে ঝোপে কচিপাতা, ঘেঁটুফুলের ঝাড়, বাতাবিলেবু গাছে ফুটে থাকা সাদা সাদা ফুল স্থানটির সৌন্দর্যকে অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছিল।
খাবারের উপকরণ: অপু-দুর্গাদের বনভোজনের খাওয়ার উপকরণের মধ্যে ছিল ভাত, করা মেটে আলুর ফল সেদ্ধ, ও পানসে আধপোড়া
বেগুনভাজা । এই উপকরণে লবণের কোনো বালাই ছিল না।
প্রশ্ন:- আমি এ গ্রামের বিশালাক্ষী দেবী।”কার সঙ্গে, কীভাবে দেবীর সাক্ষাৎ হয়েছিল ? বিশালাক্ষী দেবী তাকে কী ভবিষ্যদ্বাণী দিয়েছিল? বিশালাক্ষী দেবী কেন মন্দির পরিত্যাগ করেছিলেন?
উত্তর - নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বরূপ চক্রবর্ত্তী ভিন গাঁ থেকে নিমন্ত্রণ খেয়ে ফিরছিলেন। সন্ধ্যার সময়ে নদীর ঘাটে নামার পথের পাশে একজন সুন্দরী ষোড়শী মেয়েকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি। এভাবেই তাঁর সঙ্গে বিশালাক্ষী দেবীর সাক্ষাৎ হয়েছিল।
দেবীর ভবিষ্যদ্বাণী: বিশালাক্ষী দেবী স্বরূপ চক্রবর্ত্তীকে ঈষৎ গর্বমিশ্রিত স্বরে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেছিলেন যে, গ্রামে অল্পদিনের মধ্যেই ওলাওঠার মড়ক শুরু হবে। তিনি স্বরূপ চক্রবর্ত্তীকে এই কথা সকলকে বলতে আদেশ দেন যে, চতুর্দশীর রাতে পঞ্চানন্দতলায় একশো আটটা কুমড়ো বলি দিয়ে কালীপুজো করা হয়। এই ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে সত্যিই গ্রামে মড়ক
দেখা দিয়েছিল।
দেবীর মন্দির পরিত্যাগের কারণ: এক সময় বিশালাক্ষী দেবী ছিলেন গ্রামের মজুমদার বংশের প্রতিষ্ঠিত দেবতা। কোনো-এক সময়ে কোনো
কাজে সাফল্য পেয়ে মজুমদারেরা মন্দিরে নরবলি দিয়েছিল। তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে দেবী স্বপ্নে জানিয়ে যান যে তিনি মন্দির পরিত্যাগ করে চলে যাচ্ছেন,
আর ফিরবেন না।
প্রশ্ন:- শেষপর্যন্ত অপুর রেলরাস্তা দেখার চেষ্টার অভিজ্ঞতা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর ; অপু জীবনে প্রথমবার বাবার সঙ্গে গ্রামের বাইরে বেরিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। বাবার শিষ্যবাড়ি যাওয়ার পথে বাবাকে জিজ্ঞেস করে সে জানতে পারে যে তারা রেললাইন পেরিয়েই যাবে। তখন অপুর দিদির সঙ্গে রেলরাস্তা দেখতে যাওয়ার পুরোনো অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে। সেবার তারা অনেক কষ্ট করেও রেললাইন দেখতে পায়নি উপরন্তু রাস্তাও হারিয়ে ফেলেছিল। সে ভাবে আজ এমনই সহজে সে রেলরাস্তা দেখতে পারবে। তার জন্য ছুটতে হবে না, পথ হারাতে হবে না, বকুনি খেতে হবে না। কিছুটা গিয়েই সে দেখতে পায় একটা উঁচু রাস্তা মাঠের মাঝখান চিরে ডাইনে বাঁয়ে বহুদূর গিয়েছে। লাল খোয়ার রাশি উঁচু হয়ে ধারের দিকে সারি দিয়ে রয়েছে। সাদা সাদা লোহার খুঁটির উপর যেন একসঙ্গে অনেক দড়ির টানা বাঁধা। যতদূর দেখা যায়, ততদুর ওই সাদা খুঁটি ও লোহার টানা বাঁধা চোখে পড়ছে। বাবা হরিহর অপুকে এই রাস্তা দেখিয়ে বলেন যে এটিই হচ্ছে রেলের রাস্তা। রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছে থাকলেও তা দু-ঘণ্টা পর আসবে বলে অপুর আর রেলগাড়ি দেখা হয় না। তাই সে বাবার থেকে রেলগাড়ি সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে নেয়। ভ্রমণ সেরে বাড়ি ফিরে এই অভিজ্ঞতা সে বহুদিন ধরে অনেকের কাছে গল্প করেছিল।
পথের পাঁচালী তৃতীয় পরীক্ষা অষ্টম শ্রেণী
প্রশ্ন:- ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া কাকে ডাকতে গিয়েছিল ?
উত্তর- ভোর হতে না হতেই দুর্গার অসুখের বাড়াবাড়ির কারণে সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- কে তার খাতায় অপুকে গল্প লিখে দিতে বলেছিল ?
উত্তর- ভুবন মুখুজ্যের মেয়ে রানি একখানা ছোটো বাঁধানো খাতা অপুর হাতে দিয়ে তাকে তাতে গল্প লিখে দিতে বলেছিল।
প্রশ্ন:- দুর্গা কী রোগে মারা গিয়েছিল ?
উত্তর- দুর্গা দীর্ঘদিন ম্যালেরিয়া জ্বরে ভুগে পথ্যহীন, চিকিৎসাহীন অবস্থায় থেকে অবশেষে হার্টফেল করে মারা গিয়েছিল।
প্রশ্ন:-সর্বজয়া কোথায় কইমাছ পেয়েছিল?
উত্তর- রাতে প্রবল বৃষ্টির পরদিন সর্বজয়া বাঁশতলায়, একটা ভেসে-আসা কইমাছ পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- চড়কপূজা কী?
উত্তর- চৈত্রমাসের সংক্রান্তিতে শিবের গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়কপূজা হয়, যা অপুদের গ্রামে মেলার আকার ধারণ করে।
প্রশ্ন:- অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে কার মিল খুঁজে পেয়েছিল ?
উত্তর- অপু ইন্দুলেখার সঙ্গে তার দিদি দুর্গার মিল খুঁজে পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- অজয় কোন্ পালাতে ‘নিয়তি' সাজত ?
উত্তর- অজয় 'পরশুরামের দর্প-সংহার' পালাতে নিয়তি সাজত।
প্রশ্ন:- অপু কীসের পার্ট করবে ভেবেছিল?
উত্তর- অপু জরির মুকুট মাথায় পরে তলোয়ার ঝুলিয়ে যুদ্ধরত সেনাপতির পার্ট করবে বলে ভেবেছিল।
প্রশ্ন:-“রইল ওইখানে, কেউ জানতে পারবে না কোনো কথা, ওখানে আর কে যাবে”–এখানে কোন জিনিসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর- প্রশ্নে উদ্ধৃত জিনিসটা ছিল সেজোঠাকরুনের বাড়ি থেকে চুরি যাওয়া ছোট সোনার সিঁদুর কৌটো, যা অপু দুর্গার মৃত্যুর পর খুঁজে পেয়ে জঙ্গলের মধ্যে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
প্রশ্ন:- চড়কপুজোর আগের রাতে কোন পুজো হয় ?
উত্তর- চড়কপুজোর আগের রাতে হয় নীলপুজো।
প্রশ্ন:- বাবাকে অপু কৃপার পাত্র হিসেবে বিবেচনা করে কেন?
উত্তর- গ্রামে এত বড়ো যাত্রাদল আসছে কিন্তু অপুর বাবা সে বিষয়ে কিছুই জানে না, তাই সে বাবাকে কৃপার পাত্ররূপে বিবেচনা করে।
প্রশ্ন:- অপু কোথায় মাছ ধরতে বসে ?
উত্তর- সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে ছাতিম গাছের তলায় অপু মাছ ধরতে বসে ।
প্রশ্ন:- “... অপেক্ষা মাত্র।”—অপুর একমাত্র অপেক্ষা কীসের জন্য ?
উত্তর- অপুর একমাত্র অপেক্ষা বড়ো হয়ে ওঠার জন্য। বড়ো হয়ে অপু জগৎ-জানার, মানুষ-জানার, মানুষ চেনার আনন্দ যজ্ঞে যোগ দেবে, মনে মনে তারই অপেক্ষায় থাকে সে।
প্রশ্ন:- অপু যাত্রাদলে কত টাকা মাইনে পেতে পারে বলে অজয় মনে করেছিল ?
উত্তর- অজয় মনে করেছিল অপু তার গানের গলার জন্য যাত্রার দলে অনায়াসে পনেরো টাকা মাইনে পেতে পারে।
প্রশ্ন:- দুর্গা মারা যাওয়ার আগে অপুর কাছে কোন্ ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল?
উত্তর- মারা যাওয়ার আগে দুর্গা তার আদরের ভাই অপুর কাছে রেলগাড়ি দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল।
প্রশ্ন:- দুর্গা টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল কেন?
উত্তর- দুর্গার কাছে খেলা দেখার পয়সা ছিল না বলে সে টিনের বাক্সের খেলা না দেখে চলে যাচ্ছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে কোথায় গিয়েছিলেন?
উত্তর- হরিহর বাড়ি থেকে বেরিয়ে প্রথমে নদিয়ার গোয়াড়ি কৃল্পনগরে গিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- দুর্গার কোন্ শক্তির উপর অপুর শ্রদ্ধা ছিল না ?
উত্তর- দুর্গা অর্থাৎ তার দিদির শিল্পানুভূতি শক্তির উপর অপুর কোনো কালেই শ্রদ্ধা ছিল না।
প্রশ্ন:- “সর্বজয়া আর কোনোমতো চাপিতে পারিল না ... কাঁদিয়া উঠিল।”সর্বজয়া কার কাছে কীসের জন্য কাঁদিয়া উঠিল?
উত্তর- সর্বজয়া হরিহরের কাছে দুর্গার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ করে কেঁদে উঠেছিল।
প্রশ্ন:- “আমি কী করব, আমি তো আর বলিনি যাবার কথা ?”- কে কাকে কথাগুলি বলেছিল ?
উত্তর- অপু রানিকে প্রশ্নের উত্তরে উদ্ধৃত কথাগুলি বলেছিল।
প্রশ্ন:- রামকবচ লিখে হরিহর কার কাছ থেকে কত টাকা পেয়েছিল?
উত্তর- 'রামকবচ' লিখে হরিহর বেহারি ঘোষের শাশুড়ির কাছ থেকে তিন টাকা পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপু হরিহরকে কোন্ বই বারবার কিনে আনতে বলেছিল।
উত্তর- অপু হরিহরকে 'পদ্মাপুরাণ' বইটি কিনে আনতে বলেছিল।
প্রশ্ন:- অজয় অপুর মাকে কোন্ গানটা শুনিয়েছিল।
উত্তর- অজয় অপুর মাকে 'কোথা ছেড়ে গেলি এ বন-কাস্তারে প্রাণপ্রিয় প্রাণ সাথি রে’গানটি শুনিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপুর দফতরের চরিত্রমালা' বইটির লেখক কে?
উত্তর- অপুর দফতরের চরিতমালা' বইটির লেখক হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
প্রশ্ন:- নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম কী? সে কোন্ শ্রেণিতে পড়ে?
উত্তর- নীলমণি রায়ের বড়ো ছেলের নাম সুরেশ।
সুরেশ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
প্রশ্ন:- হরিহর রানাঘাটের রাজারে অপুর জন্য কী বই কিনেছিল ? তার মূল্য কত ছিল?
উত্তর- হরিহর রানাঘাটের বাজারে অপুর জন্য 'সচিত্র চণ্ডী মাহাত্ম্য বা। কালকেতু উপাখ্যান' বইটি কিনেছিল।
উল্লিখিত বইটির মূল্য ছিল ছয় আনা।
প্রশ্ন:- “রাজপুত্রের প্রতি সেনাপতির বিশ্বস্ততার নিদর্শন দেখা গেল না।”-রাজপুত্র এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম কী কী ছিল ?
উত্তর- "পথের পাঁচালী' উপন্যাসে উল্লিখিত রাজপুত্রের প্রকৃত নাম ছিল অজয় এবং সেনাপতির প্রকৃত নাম ছিল কিশোরী।
প্রশ্ন:- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া কী পথ্য দিয়েছিলেন?
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে দুর্গাকে জ্বরের সময় সর্বজয়া পথ্য হিসেবে নিমছাল সেদ্ধ দিয়েছিলেন।
প্রশ্ন:- নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে কোন্ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন ?
উত্তর- নবাবগঞ্জ থেকে দুর্গাকে শরৎ ডাক্তার দেখতে এসেছিলেন।
প্রশ্ন:- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে কী বিক্রি করতে গিয়েছিল?-
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে সর্বজয়া নাপিতের বউয়ের কাছে তার বিয়ের দান হিসেবে পাওয়া কাসার রেকাবি বিক্রি করতে গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপু রাজকুমার অজয়কে কী কী গান শুনিয়েছিল ?
উত্তর-;অপু রাজকুমার অজয়কে দাশু রায়ের পাঁচালির গান 'শ্রীচরণে ভার একবার গা তোলো হে অনন্ত' এবং অন্য একটি গান 'খেয়ার পাশে
বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে' শুনিয়েছিল।
প্রশ্ন:- “নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রী আশ্চর্য হইয়া বলিলেন—দুগগা? কেন কী হয়েচে দুগ্গার ?”-
"-এ কথার উত্তরে সর্বজয়া কী বলেছিল ?
উত্তর- নীলমণি মুখুজ্যের স্ত্রীর প্রশ্নের উত্তরে সর্বজয়া বলেছিল যে, কদিন থেকেই দুর্গার জ্বর আসছিল-যাচ্ছিল। দুর্গার ম্যালেরিয়া হয়েছিল,
সন্ধ্যে থেকে জ্বর বেড়েছে। তার ওপর রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি। চিন্তায় দিশাহারা হয়ে তাই সর্বজয়া নীলমণি মুখুজ্যেকে ডাকতে এসেছিল।
প্রশ্ন:- “নিবারণের মা স্বীকার হইয়া গেল।”— নিবারণের মা কোন্ কাজের ক্ষেত্রে তার সম্মতি জানিয়েছে?
উত্তর- সর্বজয়া নিবারণের মায়ের কাছে বৃন্দাবনী চাদরের পরিবর্তে আধকাঠা চাল চেয়েছিল—এতে নিবারণের মা সম্মতি জানিয়েছিল।
প্রশ্ন:- শরৎ ডাক্তার কোথা থেকে এসেছিলেন ?
উত্তর- শরৎ ডাক্তার নবাবগঞ্জ থেকে এসেছিলেন।
প্রশ্ন:- হরিহর শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে কত টাকা প্রণামী পেয়েছিল ?
উত্তর- হরিহর একটি কাঠের গোলাতে শ্যামাবিষয়ক গান গেয়ে এক টাকা প্রণামী পেয়েছিল।
প্রশ্ন:- চড়কের দিন কে মারা গিয়েছিল?
উত্তর- চড়কের দিন গ্রামের আতুরি বুড়ি মারা গিয়েছিল।
প্রশ্ন:- অপুর চড়কের মেলা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' উপন্যাসে চড়কের মেলার বর্ণনা আছে। এই চড়কের অভিজ্ঞতা
অপুর জীবনে ভিন্ন রকমের ছিল। দিদি মারা যাওয়ার পর এ বারের চড়ক তার কাছে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছিল। আগের বছরও দুর্গা পট
কিনে আনন্দ করেছিল। কিন্তু এবার আর সে নেই। মেলার গোলমালে বাঁশির সুর শুনে পিয়ে বাঁশি কেনে অপু। এ ছাড়াও চিনিবাস ময়রার
কাছ থেকে সে দু-পয়সার তেলেভাজা খাবার কেনে। সে দেখে নানা রঙিন কাপড়, জামা, কোরা শাড়ি পরে, বাঁশি ও নানারকম খেলনা কিনে বাড়ি ফিরছে। পরদিন অপুরা গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে, তাই অপু ঠিক করে নতুন জায়গায় যদি চড়ক না হয় তাহলে বাবাকে বলে সে নিশ্চিন্দিপুরে মেলা দেখতে আসবে।
প্রশ্ন:- অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করো।
উত্তর- 'পথের পাঁচালী' উপন্যাসে আমরা অপুর যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতার বিবরণ পাই। যাত্রার দিন সন্ধে থেকেই অপু যাত্রার আসরে গিয়ে বসে। যাত্রা আরম্ভ হলে পুরো জগৎসংসার অপুর কাছে মুছে যায়। শুধুমাত্র যাত্রার ম৭টি ছাড়া সে আর কিছু দেখতে পায় না। কোনো দিকেই তার আর খেয়াল থাকে না। বেহালার সুর, রাজা, মন্ত্রীর আনাগোনা তার মনকে মাতিয়ে দেয়। বাবা এই যাত্রা দেখল না বলে অপু মনে মনে আপশোশ করে। পরে বাবা এসেছে দেখে সে ভীষণ খুশি হয়। রাজার কার্যকলাপ, মন্ত্রীর চক্রান্ত, রাজপুত্র অজয়, রাজকুমারী ইন্দুলেখার কষ্ট, ইন্দুলেখার মৃত্যুতে, অজয়ের হাহাকার অপুকে মুগ্ধ করে। যাত্রার চরিত্রদের দুঃখে অপুর মনও ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
প্রশ্ন:- “অপু তাহাকে সঙ্গে করিয়া নদীর ধারের দিকে বেড়াইতে গেল।”—অপু কাকে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল? সে কী কী গানগেয়েছিল?
উত্তর;- উদ্দিষ্ট ব্যক্তি: অপু যাত্রার দলের অভিনেতা অজয়কে সঙ্গে নিয়ে নদীর ধারে গেল।
গীত গান: নদীর ধারে গিয়ে অজয় অপুকে গান গাইতে অনুরোধ করে। অপুর গান গেয়ে বাহাদুরি নিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু যাত্রাদলের ছেলের সামনে গান গাইতে তার মনে ভয় হয়। শেষে অনেক কষ্টে লজ্জা কাটিয়ে সে বাবার মুখে শোনা দাশুরায়ের পাঁচালি থেকে শ্রীচরণে তার একবার গা তোলো হে অনন্ত' গানটি শোনায়। অজয়ের প্রশংসায় উৎসাহিত হয়ে সে দিদির কাছে শেখা—'খেয়ার পাশে বসে রে মন ডুবল বেলা খেয়ার ধারে' গানটিও করে।
প্রশ্ন:-. দুর্গার কী হয়েছিল? তাকে কোন্ ডাক্তার দেখেছিল এবং কী বলেছিল?
উত্তর- দুর্গার অসুস্থতা: দুর্গার ম্যালেরিয়া জ্বর হয়েছিল। সেই সঙ্গে অনিয়ম, জলে ভিজে ভিজে কচু শাক তোলা, ওষুধপথ্যের অভাব ও জ্বরকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। দুর্গার জ্বর ভীষণ বেড়ে গেলে নীলমণি মুখুজ্যের ছেলে ফণী নবাবগঞ্জ থেকে শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনে। ডাক্তার দেখেশুনে ওষুধ দেন। জ্বর বেশি হলে জলপটি দেওয়ারও নির্দেশ দেন। পরদিন ঝড়বৃষ্টি থামে, রোদ ওঠে। দুর্গা একটু সুস্থ হয়ে করুণ স্বরে দু-একটা কথাও বলে। কিন্তু পরের দিন দুর্গা মারা যায়। তখন শরৎ ডাক্তার এসে জানায়, ম্যালেরিয়ার শেষ পর্যায়ে, খুব জ্বরের পর যখন বিরাম হয়েছে তখনই দুর্গা হার্টফেল করেছে।
প্রশ্ন. মৃত্যুর পূর্বে দূর্গা অপুর কাছে কী দেখানোর অনুরোধ করেছিল? অপু তাকে উত্তরে কী বলেছিল ?
উত্তর- দুর্গার অনুরোধ: বৃষ্টিবাদলার মধ্যে নীলমণি মুখুজ্যের উদ্যোগে শরৎ ডাক্তার এসে ওষুধপত্র দেওয়ার পর দুর্গা আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। অপু সর্বদা দিদির কাছে বসে থাকে। এরকমই এক সকালে দুর্গা অপুকে ডাকে ও তার কাছে রেলগাড়ি দেখতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে।
অপুর উত্তর: উত্তরে অপু তাকে জানায় যে দুর্গা সেরে উঠলেই বাবাকে বলে তারা সকলে মিলে রেলগাড়িতে চড়ে গঙ্গা নাইতে যাবে।
প্রশ্ন:- “দিন নাই, রাত নাই, সর্বজয়া শুধুই স্বপ্ন দেখে।”—সর্বজয়া কী স্বপ্ন দেখত ?
উত্তর- সর্বজয়া স্বপ্ন দেখত, একদিন তারা আর গরিব থাকবে না। জীবনে কোনও কষ্ট থাকবে না তাদের। পাড়ার একপাশে খড়ের দু-তিনখানা
ঘর থাকবে। গোয়ালে গোরু থাকবে, গোলাভরতি ধান থাকবে। তার বাড়িটিকে ঘিরে থাকবে সবুজ প্রকৃতি, চারপাশ ভরে থাকবে পাখির
ডাকে। অপু সকালে দুধমুড়ি খেয়ে পড়তে বসবে। দুর্গা আর ম্যালেরিয়ায় ভুগবে না। পাড়ার সবাই তাদের সম্মান করবে।
প্রশ্ন:- "ছেলেমেয়ে ঘুমাইয়া পড়িলেও সর্বজয়ার ঘুম আসে না।” সর্বজয়ার ঘুম আসে না কেন ?
উত্তর- ছেলেমেয়ে ঘুমিয়ে পড়লেও নানা দুশ্চিন্তায় সর্বজয়ার ঘুম আসে না। এক ঘন বর্ষার রাতে প্রচণ্ড বৃষ্টিতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়ার খুব ভয় হয়। হরিহরও তখন বাড়িতে ছিলেন না। এক অজানা আশঙ্কায় সর্বজয়ার বুকের ভিতরটা কেঁপে ওঠে। টাকা-পয়সার চেয়েও বাড়ির বাইরে থাকা হরিহরের জন্য তার বেশি চিন্তা হয়।
প্রশ্ন:- আতুরি বুড়িকে সবাই কী বলত? সে মারা যাওয়ার পর অপুর কী মনে হয়েছিল ?
উত্তর- বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত 'ছোটোদের পথের পাঁচালী' থেকে জানা যায় আতুরি বুড়িকে গ্রামের সবাই ডাইনি বলত।
উত্তর- আতুরি বুড়ি মারা যাওয়ার পর অপুর মনে হয়েছিল, আতুরি বুড়ি আসলে ডাইনি নয়। গ্রামের একধারে লোকালয়ের বাইরে সে একা থাকত। সে ছিল দরিদ্র ও অসহায়। তার নিজের বলতে কেউ ছিল না।
প্রশ্ন:- সতু অপুকে কোন্ শর্তে বই দিতে রাজি হয়েছিল ? অপুর মা তাকে কী বলে বকেছিল ?
উত্তর- সত্তুর শর্ত: সতুদের বাড়ির আলমারিতে প্রচুর বই ছিল। অপু একটা বই পড়তে চেয়েছিল বলে সতু তাকে শর্ত দিয়েছিল যে, তাদের মাঠের পুকুরে রোজ মাছ চুরি হয়ে যাচ্ছে। তাই তার জ্যেঠামশায় তাকে বলেছে দুপুরে পাহারা দিতে। অপু যদি সেখানে তার বদলে যেতে রাজি থাকে তবে সে তাকে বই পড়তে দেবে। অপু বই পড়ার লোভে এই শর্তে রাজি হয়েছিল।
অপুর মায়ের তিরস্কার : অপুর মা সর্বজয়া তার বই পড়ার কাহিন শুনে তাকে বকেছিল ‘হাবলা ছেলে' বলে। একটা বই পড়ার লোভে সে পরের মাছ পাহারা দেয়, এতে সর্বজয়া তাকে বোকা বলেছিল।
প্রশ্ন:- হরিহর স্ত্রী-পুত্র-কন্যার জন্য কী কী উপহার কিনে এনেছিল ?
উত্তর- হরিহর কন্যা দুর্গার জন্য একটি লালপাড় কাপড় ও আলতার পাতা, পুত্র অপুর জন্য ‘সচিত্র চন্ডীমাহাত্ম্য বা কালকেতুর উপাখ্যান' ও টিনের রেলগাড়ি এবং স্ত্রী সর্বজয়ার জন্য কাঠের চাকি-বেলুন ও অন্যান্য গৃহস্থালির জিনিস এনেছিল।
প্রশ্ন:- যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপুর কী মনে হয়েছিল ?
উত্তর- যাত্রাপালায় অজয়কে দেখে অপু মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল। তার মনে হয়েছিল, টুকটুকে এই রাজপুত্র অজয়কেই এতদিন সে মনে মনে
চেয়েছিল। মায়ের মুখে শোনা রূপকথার কাহিনি, শৈশবের কল্পনায় যে রাজপুত্রকে তার প্রাণ চেয়েছে, সেই রাজপুত্র অজয় ছাড়া আর
কেউ নয়। তার চোখ, মুখ, গলার স্বর—সবকিছুই বড্ড কাছের, বড্ড চেনা বলে মনে হয়েছে তার।
প্রশ্ন:- "দুর্গার অশান্ত, চঞ্চল প্রাণের বেলায় জীবনের সেই সর্বাপেক্ষা বড়ো অজানার ডাক আসিয়া পৌঁছিয়াছে।”—দুর্গার জীবনের সকরুণ পরিসমাপ্তির ছবি কীভাবে 'ছোটোদের পথের পাঁচালী'-তে অঙ্কিত হয়েছে, তার পরিচয় দাও।
উত্তর- বিভূতিভূষণ তাঁর মানসকন্যা দুর্গার মৃত্যুর যে চিত্র ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী' গ্রন্থে এঁকেছেন, তা অত্যন্ত করুণ ও বেদনাবিধুর।
ম্যালেরিয়ায় কাবু দুর্গার জ্বর আগেরদিন সন্ধ্যা থেকেই খুব বাড়াবাড়ি হয়। সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টিতে তাদের ভাঙা ঘরে আতঙ্কের প্রহর কাটে। ভোরে দুর্গার অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় নবাবগঞ্জের শরৎ ডাক্তারকে ডেকে আনা হয়। সেদিন বিকেলে দুর্গার জ্বর ছেড়ে যায়। কিন্তু পরদিন বেলার দিকে হার্টফেল করে সে মারা যায়।
প্রশ্ন:- “মাছ ধরিবার শখ অপুর অত্যন্ত বেশি।”-অপুর মাছ ধরার শখের কথা ‘ছোটোদের পথের পাঁচালী'-তে কীভাবে ফুটে উঠেছে?
উত্তর;- অপুর মাছ ধরার খুব শখ ছিল। সোনাডাঙা মাঠের নীচে ইছামতী নদীর ধারে কাঁচিকাটা খালের মুখে ছিপে প্রচুর মাছ ওঠে বলে সে সেখানে গিয়ে একটা বড়ো ছাতিম গাছের তলায় মাছ ধরতে বসে। মাছ খুব কম ধরা পড়ে, ঘণ্টার পর ঘন্টা জলে ফাতনা স্থির হয়ে
থাকে। অপু অধৈর্য হয়ে এদিক ওদিক ঘুরে এসে অনেকক্ষণ পরে হয়তো ফাতনা একটু একটু নড়তে দেখে। মাছ না পেলে ছিল গুটিয়ে
বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়।
প্রশ্ন:- “ছেলের এত আদরের জিনিসটা জোগাইতে না পারিয়া তাহার বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করে। ”-কোন্ জিনিসের কথা বলা হয়েছে? হরিহরের বুকের ভিতর বেদনায় টনটন করত কেন ?
উত্তর ;-উদ্দিষ্ট বন্ধু: আলোচ্য উক্তিতে সাপ্তাহিক 'বঙ্গবাসী' পত্রিকার কথা বলা হয়েছে।
হরিহরের বেদনার কারণ: অপু পড়তে খুব ভালোবাসত। তাই
ছেলে বড়ো হয়ে পড়বে ভেবে হরিহর অনেক 'বঙ্গবাসী' পত্রিকা সযত্নে বান্ডিল বেঁধে তুলে রেখেছিলেন। এই পত্রিকাটির জন্য অপু পাগল ছিল। তাই শনিবার সকালবেলা খেলা ফেলে সে ডাকবাক্সের কাছে অপেক্ষা করত। পত্রিকাটির প্রতি অপুর এত ভালোবাসার কথা হরিহর জানতেন। পত্রিকার দাম দিতে না পারায় হরিহরের বাড়িতে বঙ্গবাসী দেওয়া বন্ধ করেছিল কাগজওয়ালা। অর্থের অভাবে ছেলেকে তার আদরের পত্রিকাটি কিনে দিতে পারতেন না বলে হরিহর খুব কষ্ট পেতেন।
প্রশ্ন:- “আর একটু বড়ো হইলে সে এ-দল ছাড়িয়া দিবে”-এ কথা কার মনে হয়েছিল ? কেন মনে হয়েছিল ?
উত্তর;- এ কথা যাত্রাদলের কিশোর অভিনেতা অজয়ের।
অজয় যে যাত্রাদলের অভিনেতা, সেই দলের অধিকারী নীলমণি হাজরা অজয়কে খুব মারে। এ ছাড়া আশু পালের যাত্রা দলে খুব সুখে থাকা যায়। সেখানে রোজ রাত্রে লুচি খেতে দেয়। না খেলে তিন আনা পয়সা খোরাকি দেয়। এ কারণেই অজয় ভেবেছে যে, একটু বড়ো হলেই সে নীলমণি হাজারার দল ছেড়ে দেবে।
প্রশ্ন:- “এরূপ অপরূপ বসন্তদৃশ্য অপু জীবনে এই প্রথম দেখিল।”- বসন্ত দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
উত্তর;- হির গাড়োয়ানের গাড়িতে অপু বাবা মায়ের সঙ্গে নিশ্চিন্দিপুর ছেড় চলে যাচ্ছিল। পড়ন্ত রোদে তাদের গাড়ি সোনাডাঙার মাঠ পেরোচ্ছিল। মাঠের এখানে ওখানে বনঝোপ, শিমুল, বাবলা আর খেজুর গাছ। চারিদিকে শোনা যাচ্ছে পাপিয়ার বউ কথা কও ডাক। বিরাট মাঠটির মাথার ওপরে তিসির ফুলের মতো রঙের ঘন নীল আকাশ উপুড় হয়ে পড়েছে। সবুজ ঘাসে মোড়া মাঠটির কোথাও চাষবাসের চিহ্ন নেই। শুধু গাছপালার সবুজ রং ছেয়ে গেছে। সামনের চওড়া মাটির রাস্তাটা দেখে মনে হয় যেন উদাস বাউল। মাঠ পেরিয়ে তাদের সামনে পড়ল মধুখালির বিল। প্রাচীনকালের শুকিয়ে যাওয়া নদী এই মধুখালির বিলে ফুটে আছে অজস্র পদ্মফুল। অপু গাড়িতে বসে মাঠ ও চারধারের অপূর্ব আকাশের রংটা দেখছিল। বসন্ত যেন চৈত্র-বৈশাখের মাঠ-বন- বাগানকে অদ্ভুত আনন্দে ভরিয়ে তুলেছে। কোকিলের এলোমেলো ডাকে, নাগকেশর ফুলের ভারে, বনফুলের গন্ধ ভরা জ্যোৎস্নারাতের দখিনা বাতাসে বসন্ত যেন আনন্দনৃত্য শুরু করেছে। অপু বন্ডের এমন অপরূপ রূপ জীবনে যেন প্রথমবার দেখল।
প্রশ্ন:- অপু ফ্রান্স দেশটি সম্বন্ধে কী জেনেছিল?
উত্তর;- সুরেশদার ইংরেজি ম্যাপে অপু ভূমধ্যসাগর দেখেছিল। সে জানত, ভূমধ্যসাগরের ওপারে অবস্থিত ফ্রান্স দেশ । বহুদিন আগে ফ্রান্সকে বিদেশি সৈন্যরা দখল করে নিয়েছিল। ফ্রান্স তখন বিপন্ন, রাজা শক্তিহীন এবং চারিদিকে অরাজকতা, লুঠতরাজ চলছে। দেশের এই খারাপ সময়ে লোরেন প্রদেশের এক অজপাড়াগাঁয়ে এক চাষির মেয়ে ভেড়া চরাতে যেত। সে তার নীল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশের দুঃসময়ের কথা চিন্তা করত। অনেকদিন ধরে এই কথা ভাবতে ভাবতে তার সরল মনে যেন কার গলার আওয়াজ শুনতে পেল সে। কেউ যেন তাকে বলছে, তুমিই ফ্রান্সকে রক্ষা করবে। তুমি রাজসৈন্য জড়ো করে অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করো। দেশের মুক্তির ভার তোমার হাতে। দেবী মেরি তাকে উৎসাহ দেন। স্বর্গ থেকে তাঁর আহ্বান শুনতে পায় মেয়েটি। তারপর তারই নেতৃত্বে নতুন উৎসাহে ফরাসি সৈন্যরা শত্রুদলকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। সেই ভাবুক কুমারী মেয়েটি নিজে অস্ত্র ধরে দেশের রাজাকে সিংহাসনে বসায়। কিন্তু তার দেশের কুসংস্কারাছন্ন মানুষ সেই মেয়েটিকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। অপু বই পড়ে ফ্রান্স দেশ সম্বন্ধে এইসব কথা জেনেছিল।
প্রশ্ন:- বর্ষা অপুদের দারিদ্র্যকে কীভাবে প্রকট করেছে তোমাদের পাঠ্য অংশ অনুযায়ী আলোচনা করো।
উত্তর। গ্রামে বর্ষার রূপ : হরিহর কাজের খোঁজে যখন বাইরে ছিলেন সেইসময় নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে প্রবল বর্ষা নামে। নদীর জল বাড়তে থাকে, পথঘাট জলে ভরে ওঠে। অপুদের বাড়ির বাঁশতলা, গ্রামের তেঁতুলতলাতে একহাঁটু
করে জল জমে যায়। গ্রামের একধারের জীর্ণ কোঠাবাড়িতে অপু-দুর্গাকে নিয়ে সর্বজয়া নিঃসহায় অবস্থার মধ্যে পড়ে।
অপুদের চরম দারিদ্র্য: নিজে উপবাসী থেকে কয়েকদিন ছেলেমেয়েকে ওলশাক, কচুশাক প্রভৃতি খাওয়ানোর পর সর্বজয়ার ঘরে আর কিছুই ছিল না। একদিকে প্রবল বৃষ্টি ও দুর্গার জ্বর এবং অন্যদিকে বাইরে থাকা স্বামীর জন্য চিন্তা সর্বজয়ার অসহায়তাকে বাড়িয়ে তোলে। সংসারের অভাব চরমে ওঠে। ঘরের জিনিস বিক্রি করে দিয়ে কিছুটা চাল জোগাড়ের চেষ্টা করে সর্বজয়া। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ঘরের ফুটো ছাদ দিয়ে সর্বত্র জল পড়তে থাকে।
দুর্গার অসুস্থতা: খাবার ও ওষুধের অভাবে দুর্গার জ্বর বাড়তে থাকে। বৃষ্টির জল যত বেশি ঘরে ঢোকে, অপুদের দারিদ্র্য তার থেকেও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। প্রবল বৃষ্টিতে অপুদের বাড়ির রান্নাঘরের দেয়াল পড়ে যায়। দুর্গার মৃত্যু: এক সময় ঝড়বৃষ্টি থেমে গেলেও দুর্গার জ্বর কমে না। নবাবগঞ্জ থেকে ডাক্তার এসে দেখে যান।
শেষপর্যন্ত ম্যালেরিয়ায় দুর্গার মৃত্যু হয়। এভাবেই ঝড় ও বৃষ্টির দাপট হরিহর ও সর্বজয়ার অভাবের সংসারকে সবদিক দিয়েই আরও বেশি দরিদ্র করে দিয়ে যায়।
